রাঙামাটিতে কমেছে শীতের সবজির দাম ॥ তেল-চিনি ও চালের দাম চড়া

132

॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥

রাঙামাাটি শহরে শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে কমতে শুরু করেছে টমেটো, সিম ও বেগুনসহ শীতকালীন সবজির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা দাম কমে আসায় একদিকে যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে বেচাকেনা বাড়ায় খুশি খুচরা বিক্রেতারাও। এদিকে স্বস্তি ফিরছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। সবজি ও মাছের দাম কিছুটা কম হলেও তেল, চিনি-চালের দাম বেশ চড়া।

বুধবার সাপ্তাহিক হাটবার সকালে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে লাল টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা করে,যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সবুজ সিম কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। লাল সিম (পরিপক্ব) কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা,যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। এছাড়া বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে।

নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজিতে,যা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজিতে। এছাড়া বরবটি কেজিপ্রতি ৪০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচ ৫০ টাকা,মুলা ২০ টাকা ও গাজর ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন,সাধারণত গরমের সময় যে সবজিগুলো বেশি বিক্রি হয়,সেগুলোর দাম না কমলেও শীতকালীন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজি ভেদে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। দাম কিছুটা কম হওয়ায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

এদিকে বিক্রেতারা দাম কমার কথা বললেও ভোক্তাদের অভিযোগ,শীতকালীন সবজি বাজারে আসলেও অন্যান্য বছরের মতো দাম কমছে না। বরং দাম অনেক বেশি। বাজার করতে আসা এক বেসরকারি চাকরিজীবী মো.ফরিদুল আলম বলেন,শীতের মৌসুমেও সবজির বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। অথচ এই সময়ে অনেক কম থাকার কথা।

এই প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা আউলাদ খান বলেন,কিছু সবজির দাম ওঠা-নামা করে। গতকালের চেয়ে আজ কাঁচা মরিচের দাম একটু বেশি। তবে তা গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। এখন সবজির মৌসুম তাই কয়েকদিন পর সবজির দাম কমবেই। তিনি আরও বলেন,বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই,যে কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আর একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে,সেটা আর কমতে চায় না।

তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি বেশি দামে কিনে আনায় দাম কম রাখার কোনো সুযোগ নেই। বাজারে ভরা মৌসুমেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। কেজিপ্রতি বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা,পাইজাম ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা এবং সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৭৮ টাকায়।

বিশ্ববাজারে মসলার দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারেও বেড়েছে মসলার দাম। ৫০ টাকা বেড়ে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০টাকা। এ ছাড়া,এলাচ দারুচিনি ও লবঙ্গের দাম মান ভেদে বেড়েছে ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা বলছেন, কোনও পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গেই তা কার্যকর হয়। কিন্তু দাম কমলে দেখা যায় উল্টোটা। দাম কমলে পণ্য সরবরাহে গড়মিসি শুরু করে কোম্পানিগুলো। খুচরা বিক্রেতারা কমদামে কোনও পণ্য ক্রেতার হাতে দিতেই চান না।

গত রোববার থেকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাঁচ টাকা কমে ১৮৭ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু ক্রেতাদের এখনও গুনতে হচ্ছে আগের নির্ধারিত ১৯২ টাকা। কোম্পানিগুলো এখনও নতুন দরে তেল বাজারে ছাড়েনি। আবার এক মাস আগে চিনির দাম ১০৮ টাকা (প্যাকেট) নির্ধারণ করার পরও ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেল নয়,খোলা পাম তেলও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম তেল ১১৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে ১২০ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেনি মসুর ডাল,আটা ও ময়দার দাম। খুচরায় প্রতি কেজি মসুর ডাল এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি আটা ৭০ টাকা ও ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।

কিছুটা সুখবর আছে মাছের বাজারেও। ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে চাষের কই,তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ। এছাড়া রুই,কাতলা কার্পজাতীয় চাষের মাছ ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশি জাতের মাছের দাম খুব একটা হেরফের হয়নি। এ ছাড়া মুরগি,গরুর মাংস ও অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।