রাঙামাটিতে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রাণ গেলো বিদ্যুৎ শ্রমিক বাপ্পীর

1403

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাঙামাটিতে কর্তৃপক্ষের অসতর্কতায় আবারও প্রাণ গেলো এক বিদ্যুৎ শ্রমিকের। শুক্রবার রাঙামাটি শহরে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের কলেজ ফিডারের মেরামত কাজ করার সময় দেবাশীষ নগর এলাকায় আহত হওয়া শ্রমিক বাপ্পী (২৫) চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যায় বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শ্রমিকের স্বজনদের বক্তব্য থেকে জানা গেছে, শুক্রবার কলেজ ফিডারের মেরামত কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুনা ট্রেডার্সের শ্রমিক বাপ্পী (২৫) শহরের দেবাশীষনগর এলাকার গ্যারেজের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাইনের মেরামত কাজ করছিল। একবার কাজ করে নামার পর শ্রমিক বাপ্পী দুপুর ১২টার দিকে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে আবার মই বেয়ে উপরে উঠে কাজে হাত দেওয়ার সাথে সাথে ১১ হাজার কেভির শক এ ৩০ ফুট নীচে পড়ে যায়। তখন উপস্থিত সবাই বুঝতে পারে ‘সাট ডাউনে’ থাকা ওই লাইনটিতে শ্রমিক বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সম্মতি (ক্লিয়ারিং) না নিয়েই বিদ্যুৎ চালু করে দেওয়া হয়েছে।

এ সময় আহত বাপ্পীকে তার সতীর্থরা দ্রুত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলেও দুই হাত ঝলসে যাওয়া বাপ্পীর চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় চিকিৎসকরা। স্বজনরা নিরুপায় হয়ে তাকে চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখানেই তার জীবন হার মেনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এর আগে রাঙামাটি শহরে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আরো শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুতের লাইন মেরামতের বিষয়ে শহরে পূর্বেই ঘোষণা দেওয়া হলেও কাজটি কোনো প্রকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই আরএসকিউ পদ্ধতিতে নির্বাহী প্রকৌশলীর মৌখিক নির্দেশে করা হচ্ছিল। একেতো কাজটি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হচ্ছিল তদুপরি বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা লোকজনের অবহেলায় এই শ্রমিকের অকাল মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুনা ট্রেডার্সের লোকজন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুনা ট্রেডার্সের হয়ে কাজ করা শ্রমিক বাপ্পী রাঙামাটি শহরের মোল্লা পাড়ার বাসিন্দা তার একটি চার বছর বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে।

এদিকে বাপ্পীর সাথে কাজ করা অন্যান্য শ্রমিক ও পিডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিইয়েছে, উক্ত কাজের তদারকি ও শাটডাউন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী এরশাদ আলী। এই মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করছেন নিহতের স্বজনেরা। তাদের দাবি, তিনি সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের সাথেই সঠিক যোগাযোগ না রাখায় লাইন চালু হয়ে যায়। আবার তার সামনেই শ্রমিক কাজ করতে উপরে উঠে। তারা জানায় দুই এরশাদের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী এরশাদ আলী ও এস ডি এ এরশাদ) সমন্বয়হীনতাই এই প্রাণহানীর কারন।

এ ব্যাপারে উপ-সহকারি প্রকৌশলী এরশাদ আলী’র বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোন ০১৭০৮৫৬৬২৭৫ এ বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনটি বিজি মোডে দিয়ে রাখায় কথা বলা যায়নি।

ghe
এলাকাবাসী কর্তৃক বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের কয়ে়কজন কর্মকর্তা জানিয়ে়ছেন, কাজটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে না হওয়ায় সমন্বয়ও সঠিকভাবে হয়নি। এই অনিয়ম রাঙামাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এবং এর আগেও এমনি শাটডাউনে থাকা লাইনে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মূলতঃ লাইন চালু করার বিষয়ে অবহেলাই বারবার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে মেরামতি কাজগুলো সম্পন্ন করতে আসা লক্ষ লক্ষ টাকার বরাদ্দ নামমাত্র কাজ করে ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে, অফিসার, ঠিকাদার ও ইউনিয়নের মধ্যে। আহ্বান করা হচ্ছে না কোনো ধরণের টেন্ডার। স্থানীয় অনেক ঠিকাদার থাকার পরও চট্টগ্রামের মুনা ট্রেডার্স আর চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামক দুটি প্রতিষ্ঠান বারবার এসব কাজ পেয়ে যাচ্ছে নীয়মনীতি ছাড়াই। মূলত অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার লোভেই কোন প্রকার নিয়মনীতির অনুসরন না করেই মৌখিক নির্দেশে কাজ করাচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলী।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই ধরনের বৈদ্যুতিক  সরানোর ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী, নিজস্ব লাইনম্যান, ফোরম্যানের উপস্থিতির মাধ্যমে কাজটি করার নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি।

রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন যে, মূলতঃ শাটডাউন সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কাজটি করতে গিয়েই় দূর্ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে বাপ্পীর লাশ চট্টগ্র্রাম থেকে রাঙামাটি আসার পর বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে তার এলাকার লোকজন।  শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শতাধিক এলাকাবাসী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী ক্ষতিপুরণের বিষয়ে সকাল ১০টার মধ্যে লিখিত অঙ্গীকারনামা দেবেন বলে আশ্বাস দেওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ফিরে যায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় অধিবাসী হানিফ। এ রিপোর্ট লেখার সময় লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা ছিল।