রাঙামাটিতে ‘ট্রাইবাল হেলথ কার্যক্রম’ বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে মত বিনিময়

318

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাঙামাটিতে ‘ট্রাইবাল হেলথ কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ের মত বিনিময় কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জানানো হয়, একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মান সম্মত ও সমতা ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল নাগরিকের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৩ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও এই কর্মসূচির একটি অন্যতম লক্ষ্য।

সোমবার (২৮সেপ্টেম্বর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্ণফুলী মিলনায়তনে ‘ট্রাইবাল হেলথ কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভা’ শীর্ষক এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেল কেয়ার (সিবিএইচসি) এর সহযোগীতায় রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও তাদের তাদের স্বাস্থ্য চিত্র, ট্রাইবাল হেলথ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই কর্মসূচির কর্মকৌশল বিষয়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপনার মাধ্যমে এই কার্যক্রমে বিষদ চিত্র তুলে ধরা হয়।

এ সময় জানানো হয়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে এখনও মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা নিতে তাদের অনিহার কারণে পাহাড়িতে মাঝে- মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু ও অপুষ্টির হার অনেক বেশি। পক্ষান্তরে তাদের গড় আয়ুও কম এবং ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও যক্ষ্মাসহ নানা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ডাঢাবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি অসংক্রামক রোগও বেশি। পাহাড়ি জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই অসচেতনতার কারণে দেশে গড় স্বাস্থ্যসেবার সুচক কম হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতেই এই বিশেষ প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে লোকবল সঙ্কট প্রকট। কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি চারজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের বেতন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে।

চেয়ারম্যান আরো জানান, দূর্গম বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়িতে চিকিৎসকদের যাতায়াতসহ স্বাস্থ্য উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সহসা তিনটি স্পীড বোট প্রদান করা হবে। পাশাপাশি কভি পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ৫০ বেডের হাইফ্লো অক্সিজেন সিস্টেম চালু করার জন্য পরিষদ আলাদা বরাদ্দ রেখেছে। কাজের উপযুক্ততা বিবেচনায় সিভিল সার্জন চাইলেই এই অর্থ ছাড় করা হবে।

চেয়ারম্যান আরও জানান, ট্রাইবাল হেলথ কার্যক্রম চালাতে হলে দূর্গম এলাকাগুলোতে পৌছাতে হবে। রাঙামাটিতে এমন কিছু ইউনিয়ন এবং গ্রাম আছে যেগুলো সীমান্তবর্তী এলাকা। যেখানে হেলিকপ্টার ছাড়া যাওয়া যায় না। সেইসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছানো জরুরী বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।

সিভিল সার্জন ডা: বিপাশ খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক ডা: মো. আবুল হাশেম খান, কমিউনিটি হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর মহাদেব চন্দ্র রাজবংশী, রাঙামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ প্রীতি রঞ্জন বড়ুয়া, প্রকল্প পরিচালক ডা: শহীদ তালুকদার ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বেগম শাহনেওয়াজ।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নিতিশ চাকমা। পাওয়ার পয়েন্ট পেজেন্টেশনে ছিলেন- প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাঃ শামীম রেজা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ডাঃ মোঃ আজিজুর রহমান ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ গীতা রাণী দেবী।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাগণ ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, হেডম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক, এনজিও প্রতিনিধি ও রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বক্তব্য রাখেন। এতে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, হেডম্যান-কার্বারী, গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।