রাঙামাটিতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ॥ সমাজে উদ্বেগ

97

॥ নাজিয়া উদ্দিন সুফিয়া ॥

অভাবের তাড়নায় অনেকেই এখন বিদ্যালয় ছেড়ে শিশু শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। পার্বত্য রাঙামাটিতে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। হিসাব অনুসারে রাঙামাটি জেলাতে শত শত শিশু শ্রমিক পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্ন হোটেল,রেস্টুরেন্ট,পরিবহন,রাজমিস্ত্রি,দোকানপাট,গাড়ির গ্যারেজ ও বিপনী কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত রয়েছে।

এরা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না এতে দিনদিন বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। আইনগতভাবে শিশু শ্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সমাজের অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। যে বয়সে একটি শিশু বই,খাতা ও কলম নিয়ে পাঠশালায় যাওয়ার কথা ঠিক সে বয়সেই অনেক দরিদ্র পরিবারের সাংসারিক দারিদ্রতার কারণে শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ শিশুশ্রমে।

শহরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,শিশুরা হোটেলে থালা বাসন মাজার কাজ করছে চায়ের দোকানে, স’মিলে বাসা বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে এমনকি অভাবের তাড়নায়,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে তারা। আরো দেখা যায় শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশির ভাগ শিশুরা ফার্ণিচার তৈরি দোকানে,ওয়ার্কসপে, মোটর সাইকেল গ্যারেজ সহ বিভিন্ন স্থানে কাজেও জড়িয়ে পড়ছে যা একেবারেই আইনানুগ নিষিদ্ধ।

আবার ছিন্নমূল শিশুদের আলাদা একটা নাম রয়েছে টোকাই এ সকল শিশুরা সারা দিন পরিশ্রম করে যে টাকা রোজগার করে,তা দিয়ে সংসার মোটেও চলে না। যার কারণে সংসারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে তারা কিছু অসাধু মাদক সেবীদের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে এবং নিজেরাই মাদকসেবী হয়ে উঠছে যা তাদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। সমাজে অবজ্ঞা,অবহেলায় বেড়ে উঠা এসব শিশুদের মধ্যে আবার অনেকেই মালিকদের দ্বারা নিপীড়িত নিষ্পেশিত হচ্ছে। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে এদের। শরীরের প্রতি অযতœ-অবহেলায় নানা রোগ-ব্যাধিতে ভুগছে এসব শিশুরা। অভাবের কারণে সঠিক চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারছে না তারা।

শহরের গাড়ির গ্যারেজে কর্মরত শিশু শ্রমিক ওমর ফারুক,মো.রাসেল জানায়,লেখাপড়া করার স্বপ্ন থাকলেও সংসারে অভাব অনটনের কারণে লেখাপড়া করার সম্ভব হয়নি। সংসারের অভাব ঘোচাতে বাধ্য হয়েই বেচে থাকার তাগিদে আসতে হয়েছে এ কাজে। এমন শতশত শিশুরা সমাজে চরম অবজ্ঞা আর অবহেলায় বেড়ে উঠছে। এদের কারো বাবা নেই কারো মা নেই,কারো আবার মা-বাবা কেউই নেই। আবার কারো মা চলে গেছে অন্যের সংসারে।

অভিজ্ঞ মহল বলছেন,শিশু শ্রম রোধে দারিদ্র বিমোচনে সরকারকে অতি শীঘ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষেরা যদি এই অবহেলিত শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে এগিয়ে এসে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহলেই এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মানসিক সুস্থ্যতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারবে। শিশুরা সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামী দিনের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।