রাঙামাটিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির পরামর্শ সভা: পাহাড়ধস রোধে জুমচাষের বিকল্প খোঁজার সুপারিশ

408

মঈন উদ্দীন বাপ্পী- ৪ জুলাই ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি:  পাহাড়ধস রোধ ও পরিকল্পিত নগরায়ন, ফ্রি পারমিট বন্ধ করা, জুমচাষের বিকল্প চাষ পদ্ধতির প্রচলণ করা এবং পানি নিস্কাশন বিষয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেছে রাঙামাটির সুশীল সমাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে মঙ্গলবার ‘দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কমিটি’ রাঙামাটি সফরে এলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের মতামত নেওয়ার এক সভায় এই মন্তব্য করেছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন পর্যায়ের বক্তারা তাদের মত প্রকাশ করেন যে, “প্রকৃতির সাথে আমরা ভালো আচরণ করিনি, তাই প্রকৃতি আমাদের সাথে ভাল আচরণ করেনি”। আমাদের কথা ছিল একটি গাছ কাটলে দু’টি লাগাতে হবে। যেভাবে বনায়ন ধ্বংস করা হয়েছে তাতে দূর্যোগ আরো বাড়বে। যেখানে ক্ষতি হয়েছে সেখানে নতুন করে বসতি না করা দরকার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির সভাপতি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সচিব ড. অর্ধেন্দু শেখর রায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক ও আইনসৃংখলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ভুমিধসের বিভিন্ন কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পাহাড়ে জুম চাষ বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করা দরকার। এখানে পরিবেশ ও দূর্যোগ থামাতে হলে ফ্রি জ্যোত পারমিট বন্ধ করা দরকার, পারিকল্পিত ভাবে নগরায়ণ করা এবং বনায়নের বিষয়ে একযোগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, রাঙামাটির সড়কগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। রাস্তার দু’ধারে অনেক দোকান-বসতি গড়ে উঠলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার ফলে ধসের সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য সড়ক এবং বাড়ির আশ-পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করা হয়। বক্তারা জানান,  রাঙামাটিতে স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নেই। যারা ফলে কোন দুর্যোগ হলে বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্রয় নিতে হয়। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বক্তরা স্থায়ী আশ্রয় নির্মাণের জন্য জোর সুপারিশ করেন।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২৭ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির ৯ সদস্য মঙ্গলবার রাঙামাটি আসেন এবং কিছু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষের সভায় মিলিত হন।

প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য জাতীয়ভাবে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে, ফায়ার সার্ভিস, তিন জেলা প্রশাসক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে কমিটি কো-অপ্টও করা যাবে বলে জানান দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটির সভাপতি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান