রাঙামাটিতে প্রথম আন্তর্জাতিক বায়োসায়েন্স কনফারেন্স ও কার্নিভালের উদ্বোধন

2

।।সাইয়্যেদ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) এবং বাংলাদেশ বায়োসেফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি (BBBS)-এর যৌথ আয়োজনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অ্যান্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভাল (ICBC)। শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে এই সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে রাবিপ্রবি’র উপাচার্য এবং কনফারেন্সের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন গৌরবের, তেমনি এ অঞ্চলের মানুষের জন্যও তা বড় অর্জন।” তিনি শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে পরিচ্ছন্ন ও সময়নিষ্ঠ ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যের কথাও তুলে ধরেন।

কনফারেন্সের প্লেনারি সেশনের প্রথম বক্তা হিসেবে আইসিডিডিআরবি’র বায়োসেফটি প্রধান ও BBBS সভাপতি ড. আসাদুল গণি বলেন, “টেকসই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি পদ্ধতির প্রয়োজন। বিশ্ব এখন ল্যাব অটোমেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাব পরিচালনায় রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনিরা আহসান তাঁর বক্তব্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে ঔষধ আবিষ্কারে এর কার্যকারিতা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোকপাত করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “দেশে মেধার অভাব নেই, তবে গবেষণার পরিকাঠামো এবং ল্যাব সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে পারলে উদ্ভাবনের পথ খুলবে।”

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ও ‘বহুব্রীহি ধান’-এর আবিষ্কারক ড. আবেদ চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রামে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু অভিযোজন এবং পঞ্চব্রীহি ধান চাষের সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে সারাবছর ফসল উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি আগর গাছের চাষ ও জলবায়ু-বান্ধব চাষাবাদ এ অঞ্চলের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “রাবিপ্রবির সম্প্রসারণ এবং মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়নে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। কাপ্তাই হ্রদ শুধু জীবিকার উৎস নয়, এটি ফলজ ও বনজ পণ্য পরিবহনের সুযোগও তৈরি করেছে। মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুর রহমান, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিব উল্লাহ এবং পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন।

সমাপনী বক্তব্য রাখেন BBBS-এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ রাকিবুল ইসলাম এবং ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও আইসিবিসি’র সেক্রেটারি ড. নিখিল চাকমা।

সম্মেলনের টেকনিক্যাল সেশনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ এবং মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন চেয়ার ও কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সেশনে ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘Current Challenges in the Control and Eradication of Emerging and Reemerging Infectious Diseases in Humans’।