রাঙামাটিতে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র হতাশাজনক

444

DSC_0160

বিশেষ প্রতিনিধি, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পাশের হারে যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তাঁর মতে যেখানে ব্রাক্ষ্মণবড়িয়ার মতো জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাশের হার শতকরা ৮০ ভাগ পেরুতে পারেনি সেখানে রাঙামাটির মতো একটি জেলায় পাশের হার কিভাবে ৯৮% ভাগ হয়? তাছাড়া এখানকর প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসম্মত শিক্ষক নেই বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র হতাশাজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন। জীবনে প্রথমবারের মতো রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসাবে যোগদানের পর থেকেই এখানকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক চিত্র দেখে তিনি হতাশই হয়েছেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, রাঙামাটির জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম রয়েছে।

সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৬ উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর মো. সালেহ এই মন্তব্য করেন। রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এই কর্মশালার আয়োজন করে। রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা জামান কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার, তথ্য অফিসার, পিটিআইএর সুপারসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ এবং রাঙামাটি সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের প্রধান শিক্ষকগণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাঁর বক্তব্যের পুরোটাই এই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরাজমান বিভিন্ন অনিয়গুলো তুলে ধরেন এবং এখানকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় হতাশাজনক চিত্র উপস্থাপন করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন সহকারী শিক্ষক বদলীর বিষয়ে এক বিব্রতকর অভিজ্ঞতার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে বদলীর ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যোগ্যতার বিষযটি মূল্যায়ন করা হয় না। মূল্যায়িত হয় আতœীয়তার বিষয়টি। বদলীর ক্ষেত্রে দেখা হয় কোন শিক্ষক কার আতœীয় সে বিষযটি। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে সর্বক্ষেত্রে আতœীয়করন হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাঙামাটি শহরের নিউ রাঙামাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন এখানে অতিরিক্ত শিক্ষক রাখা হয়েছে যে গুলো অনুমোদিত পদের বাইরে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে সহকারী শিক্ষকদের যেভাবে শহরে নিয়ে আসা হচ্ছে তাতে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। চলতি মাসেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী সংক্রান্ত একটি সভার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন এখানেও অনেক বদলী করা হবে যেগুলো চাহিদার প্রেক্ষিতে নয় বরঞ্চ আতœীয়তার ভিত্তিতেই হবে বলে তার আশঙ্কা।

রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে মানসম্মত শিক্ষকের সংকট রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন মান সম্মত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরাও প্রকৃত শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাঙামাটি জেলার যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি বলেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত নিয়েই এইসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়েছে। কর্মশালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রধান শিক্ষক তাদের বক্তব্যে বলেন, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, শ্রেণী সংকট এর পাশাপাশি অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা গনিত ও ইংরেজী বিষয় পড়াত আগ্রহী হচ্ছেন না।

পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান