রাঙামাটিতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে হাজারো পরিবার

398

॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥

থেমে থেমে মাঝারি ও ভারি বর্ষণ হচ্ছে পাহাড়ে। যেকোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড় ধসে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে মাইকিংসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। তবুও এক শ্রেণির মানুষ চরম মৃৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ের বসবাস করছে হাজারো পরিবার।

সচেতনদের দাবি, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে স্বল্প সময়ের জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষ ঢাকঢোল পিটিয়ে পাহাড়ে বসবাসরতদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেই দায়িত্ব শেষ করে। ঘূর্ণিঝড় বা বৃষ্টিপাতজনিত কারণে ২০১৭ সালের মতো আরো একটি বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এ অবস্থায় ‘মৃত্যুকূপে’ বসবাসকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করার দাবি করেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে,রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ১৫০ পরিবার বেশি ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে এবং ৩৩টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। আর রাঙামাটিসহ ১০টি উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিমপাড়া, নতুনপাড়া, শিমুলতলী, মোনঘর, সনাতনপাড়ায় সবচেয়ে বেশি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়ার পরও সেসব এলাকায় বসত স্থাপন গড়ে উঠছে অনায়াসে।

২০১৭ সালে পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত ভেদভেদী শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা ফরিদা বেগম জানান, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত একই জায়গায় আবার নতুন বসতি গড়ে তুলে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই মৃত্যুর শঙ্কা আছে জেনেও নিজেদের ভিটামাটি ছাড়বেন না। যদি সরকার তাদের নিরাপদ জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়, সেক্ষেত্রে চলে যাবেন বলে তিনি জানান।
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো.সোহেল জানান, সরকার আমাদের জায়গা ছাড়তে বলে, কিন্তু আমরা কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো, সেই বিষয়ে কিছুই বলেনি। তাই আমরা কোথাও যাবো না। বাঁচলে এখানেই বাঁচবো, মরলে এখানেই মরবো।
একই এলাকার বাসিন্দা মো.আকবর জানান, বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় চিহ্ন দিয়ে চলে যায়। পাহাড়কে ঝুঁকিমুক্ত করে বসবাসের উপযোগী করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, পাহাড় ধস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে প্রতিনিয়ত মাইকিংও করা হচ্ছে। যাতে অতিমাত্রায় বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধস হলেও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা খুবই সতর্ক।
তিনি আরো জানান, রাঙমাটিতে প্রতিনিয়ত ছোট, মাঝারি ও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। যদি একটানা ভারি বর্ষণ হয় তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করছেন তাদের আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়।

২০১৭ সালের,১৩ জুন প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এতে দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। ব্যাপক ক্ষতি হয় পুরো জেলায়। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাঙামাটি জেলা। তিন মাস আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মানুষ।
পরের বছর ২০১৮ সালে একই সময়ে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় প্রবল বর্ষণে মৃত্যু হয় ১১ জনের। এছাড়াও ২০১৯ সালে পাহাড় ধসে কাপ্তাই উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছিল। বারবার এত হতাহতের পরও থেমে নেই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস।