রাঙামাটিতে সংখ্যা লঘু দম্পতিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন আটক ৩

239

স্টাফ রিপোর্টার

রাঙামাটি শহরের পুরাতন বাস স্টেশনের পৌর কলোনীতে এক দম্পতিকে মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার কয়েকদিন পর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মধ্যে নিন্দার ঝড় উঠে। ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা হলে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে সুবাস নামে ওই এলাকার বাসিন্দাকে একটি গাছের সাথে বেঁধে বেদম প্রহার করে একই এলাকার কিছু মানুষ। প্রহারের পর তাকে গাছের সাথে এবং পাশেই তার স্ত্রী মুন্নি দাশকেও হাত পা বেঁেধ ফেলে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, গাছের সাথে বাঁধার পরও সুবাসকে পিটানো হয়। ঘটনার কিছু কিছু ভিডিও ফুটেজ বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। ছবিতে দেখা যায় গৃহবধূ বেশ আল থালু এবং তার স্বামী অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় বাঁধা রয়েছে।

এভাবে শহর এলাকায় প্রকাশ্যে আইন হাতে তুলে নিয়ে একটি যুব দম্পতিকে পিটানো হলেও এলাকার মুরুব্বিরা বিচার করে দেবেন বলে কথা দেওয়ায় দুইদিন ঘটনাটি ধামাচাপা অবস্থায় থাকে। দুদিনেও বিচারের কোনো উদ্যোগ না দেখে পুলিশের স্মরণাপন্ন হয় গৃহবধূ মুন্নি দাশ। পুলিশ কিছুটা সময় ক্ষেপন করলে পরে মামলা রেকর্ড করেছে। মুন্নী দাশ বাদী ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে (মামলা নাম্বার-১০ তারিখ: ২৫/০৮/২০২২ইং) আটকদের নাম সজল দাশ, ইমন পাল ও সয়ন পাল।

মুন্নি দাশ এজাহারে উল্লেখ করেন- গত ১৯ আগস্ট রাতে কয়েকজন প্রতিবেশি ঘরের দরজা ভেঙ্গে তিনি ও তার স্বামীকে মারধর করে। এক পর্যায়ে হাত পা বেঁধে টেনে হিঁচরে ঘর থেকে বের করে রাস্তার পাশে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এসময় তারা ঘর ভাংচুরসহ বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দেয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

অভিযুক্তরা এর আগেও বেশ কয়েকবার সুবাস দাশ কে মারধর করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসী জানায়, তারা বড় বড় নেতার কথা বলে ভয় দেখানোর কারণে এলাকার মানুষ মুখ খোলার সাহস পায় না। এলাকাবাসীর মতে, নির্যাতিত দম্পতির স্বামী মানসিক রোগী হওয়ায় অনেকটা অসহায় অবস্থায় একঘরে করে রাখা হয়েছে তাদের। ভূক্তভোগী পরিবারটির পাশে কাউকে দাঁড়াতেও দিচ্ছেনা চক্রটি, তাদের দাবি ঘটনার পিছনে চক্রটির গভির দুরভিসন্ধি রয়েছে।

নির্যাতনের সেই মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নির্যাতিতা গৃহবধূ মুন্নী। তিনি বলেন, তার দুই শিশু কন্যার সামনেই তার উপর হামলে পড়ে দুর্বত্তরা। অভিযুক্তরা ঐদিন সুবাস দাশের মেয়েকেও নির্যাতনের হুমকি দেয় বলে জানিয়েছেন মুন্নি।

রাঙামাটি কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন জানান- ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৩জনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। আগামীকাল তাদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।

এদিকে, সভ্য সমাজে প্রকাশ্যে এই ধরনের ঘটনাটি ঘটলেও মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে পূজা উদযাপন পরিষদ, সনাতন যুব পরিষদ বা নারীবাদী সংগঠনগুলো ও নারীদের নিয়ে কাজ করা এনজিও গুলোর পক্ষ থেকে নির্যাতিতদের পাশে কেউই দাড়ায়নি বলে জানিয়েছে ভিকটিম গৃহবধু। একটি চক্র ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সনাতন যুব পরিষদের নেতা অজিত মুঠোফোনে জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে সামাজিকভাবে বসেছিলাম কিন্তু অসুস্থ হওয়ায় ভিকটিম না আসায় পরবর্তীতে বুধবার বিকেলে আবারো বৈঠক করার কথা রয়েছে।

পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ করিম আকবর জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পেরেছি সুবাস পাগলামী করার কারণে তারা মারধর করেছে। তবে সুবাসের স্ত্রীকে মারার বিষয়টি অন্যায়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর আইনী প্রতিকার হওয়া দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী টুকু তালুকদার বলেন, এই ধরনের ঘটনা রাঙামাটি শহরে প্রকাশ্যে ঘটেছে আর ভূক্তভোগী পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ।

রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) মারুফ আহাম্মেদ জানান, সার্বিক বিষয়টি বর্তমানে পুলিশের কড়া নজরদারিতে রয়েছে এবং এই ব্যাপারে মামলাও রেকর্ড করা হয়েছে; সে মোতাবেক এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় রাঙামাটির সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। নিন্দনীয় এই ঘটনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ঘটনার নির্মমতার শিকার দম্পতি ও তাদের শিশু সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।