রাঙামাটির আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে কোনো ত্রাণ সঙ্কট নেই: বিচ্ছিন্ন ত্রাণ বিতরণ গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রেস ব্রিফিং এ ডিসির বক্তব্য

444

স্টাফ রিপোর্ট- ২০ জুন ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: স্মরণকালের ভয়াবহতম পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৫  জনে। নিখোঁজ ৬ জনের মধ্য হতে সোমবার জেলা প্রশাসন আরো তিনজনকে মৃতের তালিকায় সংযুক্ত করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান সোমবার তার কার্যালয়ে দেয়া এক প্রেসব্রিফিংয়ে বলেন, আমাদের কাছে নিখোঁজ যে তিন জনের নাম ছিল ধরে নেওয়া হচ্ছে তারা মৃত। তবে আরো তিন জনের নাম জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জানা গেলেও আজ মঙ্গলবার খোঁজ খবর নিয়ে তাদের নাম মৃতের তালিকায় যুক্ত করা হতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে পাহাড় ধসে সোমবার পর্যন্ত রাঙামাটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৪ জনের মধ্য থেকে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের জেলাপ্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম স্থানান্তর করা হয়েছে।
রাঙামাটির দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকাসহ জনজীবন বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে উল্লেখ করে সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলাপ্রশাসক জানান, আমাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে বর্তমানে কোনো ত্রাণ সঙ্কট নেই।

তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন সঙ্কট একটাই আশ্রিত এই কমবেশী ২ হাজার ৯০০ মানুষকে নিরাপদে ও স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে টিকিয়ে রাখা। জেলা প্রশাসক এও জানিয়েছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা এসব মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ প্রদান করা সমিচীন হবে বিবেচনা করে প্রশাসনের গোচরের বাইরে কারো ত্রাণ বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কেউ এসব অসহায় মানুষের প্রতি সহানভূতি প্রকাশ করতে চাইলে তারা যেন এ লক্ষ্যে খোলা ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করে। ‘মানবিক সাহায্য তহবিল’ শিরোনামে রাঙামাটি ইসলামী ব্যাংক শাখায় খোলা এই হিসাবে জমা হওয়া সকল অর্থ পিড়ীত মানুষের কল্যাণ্যেই নিঃশেষে ব্যয় করা হবে বলে নিশ্চয়তা দেন জেলা প্রশাসক । এই হিসাবটির নং ২৮১৩।

জেলা প্রশাসক জানান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায্যে এ পর্যন্ত ৪৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা, ২০৬ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য এবং ঢেউটিন ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত আরো ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০০ বাল্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক জানান, আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করলেও আমরা ধরে নিচ্ছি আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে জমা হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আরো অন্তত ২০দিন সহায়তা দিয়ে চালিয়ে নিতে হবে। তাই ১৯ আশ্রয় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধান করার জন্য চারটি পৃথক সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে সেনা তত্ত্বাবধানে ৭টি আশ্রয় কেন্দ্র, পুলিশের তত্ত্বাবধানে ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র, বিজিবির তত্ত্বাবধানে ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং রেড ক্রিসেন্টের তত্ত্বাবধানে ৪টি আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য দুই বেলায় ৮০ টাকা করে নগদ এবং ২শ’ গ্রাম চাউল বরাদ্দ রয়েছে। এই হিসাবের ২৯শ’ মানুষের পিছনে প্রতিদিন সরকারিভাবে ২ লক্ষ টাকা ও প্রয়োজনীয় চাউল প্রদান করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক জানান, এর বাইরেও আমরা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের তালিকা করে তাদের হাতে পাঠবই পৌঁছে দিয়েছি। আটজন পাহাড়ি ছাত্রছাত্রী এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারছেনা শুনে আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেছি। এ ছাড়া বেশ কিছু শাড়ি পিনন ও লঙ্গি বিতরণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। সতর্কতা হিসেবে ১ লক্ষ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং এক হাজার খাবার স্যলাইন মওজুদ রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নে জবাবে জেলা প্রশাসক জানান, অর্থের বিচারে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরপণ হয়তো সম্ভব হবে না, তবে আমাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী অন্তত: ১৬ থেকে ১৭শ’ পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনের সাথে ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দিয়ে বলেন আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো ঈদের খাবারটা যেন এবার ওদের সাথেই গ্রহণ করা হয়। ঈদ পর্যন্ত এসব মানুষকে স্স্থ সবল দেহে রাখতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য স্বেচ্ছা সেবক টিম গঠনের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান ।