রাঙামাটির কোরবানীর বাজারগুলো পশু শূণ্য খাঁ খাঁ ॥ বাইরে চলে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক গরু

405

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাঙামাটির পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে আসা বিপুল পরিমাণ পশু জেলার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে গরুর সঙ্কট তৈরি পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন, অথচ রাঙামাটি জেলার কোনো গরুর বাজারই তেমন একটা জমে উঠেনি। বলতে গেলে গরুশূণ্য খা খা করছে গরুর বাজারের জন্য নির্ধরিত স্থানগুলো।

সোমবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে জেলা প্রশাসন থেকে পশুর হাট হিসেবে নির্ধারণ করা আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় এখন অবদি একটি গরুও কেউ নিয়ে আসেনি বিক্রির জন্য শহরে প্রধান পশুর হাট পৌর ট্রাক টার্মিনালে হাতে গোনা কয়েকটি গরু বাঁধা  থাকলেও বিক্রেতা নেই। ক্রেতারা এসে গরু না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কিছু লিখতে বললেন, গরু কিনতে আসা শিক্ষক জামাল। তিনি বলেন, গরু সব বাইরে চলে যাচ্ছে তাই বাজারে স্থানীয়দের জন্য কোনো গরু নেই। এতে পশু সঙ্কট সৃষ্টি হলে দাম বেড়ে যেতে পারে।

তবে দ্বিমত প্রকাশ করলেন বাজার থেকে গরু ক্রেতাদের বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা কালাম। কালাম জানালো, আসলে ক্রেতারা এখনও তেমন একটা আসছে না। তাই বিক্রেতাদের মাঝে তেমন একটা আগ্রহ নেই। ঈদ ঘনিয়ে এলে বাজার এমনিতেই জমে যাবে।

আরো একটি ভিন্ন মত প্রকাশ করলেন স্থানীয় বাজারে গুরু দেখতে আসা ব্যবসায়ী তাহের। তিনি জানালেন, আসলে গরু ব্যবসায়ীরা চালাকি করে তাদের গরুগুলো বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ছড়িয়ে রেখেছে। বাজারে গরু কম চাহিদা বেশি এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে পারলে বাজার চড়া করা সহজ হবে। এ ধরণে কৃত্রিম সঙ্কট ছাড়া ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে যারা গরু নিয়ে আসছে, তাদের গরু বোট থেকে নামার আগেই দরদাম করে কিনে অনত্র সরিয়ে ফেলছে। কেউ কেউ জেলার বাইরে চালান করে দিচ্ছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাহাড় থেকে ব্যাপারিরা প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পাহাড়ি গরু নিয়ে আসছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিয়ে আসা এসব গরু চলে যাচ্ছে বাইরে। নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে কাপ্তাই লেকে ইঞ্জিন নৌকা ভর্তি করে ব্যাপারিরা গরু নিয়ে আসছেন। বেশিরভাগ গরু কাপ্তাই জেটিঘাট এবং রাঙামাটির শহরের ট্রাক টার্মিনালের ঘাটে নামানো হয়। নৌ ঘাট থেকে গরু গুলোকে পরে মিনি ট্রাক অথবা চাঁদের গাড়ি করে জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে দেখা গেছে ১৫/২০টি ইঞ্জিন নৌকা ভর্তি করে দুই শতাধিক গরু ঘাটে নামানো হয়। এসব গরু শহরে নেবার জন্য ঘাটের পাশে বেশ কয়েকটি মিনি ট্রাক ও চাঁদের গাড়িকেও অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। চাঁদের গাড়ি ভর্তি করেও পাহাড়ি গরু সমতলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

গরু ব্যাপারি মোঃ সেকান্দার আলী ও বেলাল হোসেন জানান দেশি গরু এবং পাহাড়ি গরুর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। আর কোরবানির ঈদে পাহাড়ের গরুর প্রতি মানুষের আকর্ষন সব সময় বেশি দেখা যায়। বাজারে লাল রঙের গরুর চাহিদা থাকে সব চেয়ে বেশি। এর দামও একটু চড়া। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে পাহাড় থেকে গরু আমদানীর পরিমাণও বাড়ছে।

গরু ব্যবসায়ী জাফর জানান তিনি গত দশ বছর ধরে গরু বেচা কেনা করছেন। তারমতে কোরবানির জন্য মানুষ ছোট আকারের তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট গরু বেশি পছন্দ করেন। এসব গরুর দামও থাকে অনেকটা হাতের নাগালে। এবারের ঈদকে সামনে রেখে তিনি এ পর্যন্ত ২৭টি গরু পাহাড় থেকে নামিয়েছেন বলে জানান। আরো অনেক গরু নামার অপেক্ষায় রয়েছে। গরু আনা নেওয়া অথবা ক্রয় বিক্রয় কালে কোন প্রকার সমস্যায় পড়েননি বলেও তিনি জানান।

তবে রিজার্ভ বাজারের ব্যবসায়ী হারুন জানান, এবছর করোনার ভয়ে মানুষ পশুর হাপে গিয়ে গরু কিনতে ভয় পাচ্ছে, তাই দাম কমবেশি যাই হোক রাস্তা থেকে বা বোট থেকেই মানুষ গরু কিনে ফেলছে। গ্রাম্য চাষিরা উপযুক্ত দাম পেয়ে বোট থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছে, এতে ব্যবসায়ীদের দোষ কোথায়?। এই ব্যবসায়ী বললেন, ক্রেতাদের জন্য সুখবর হলো এবার গরুর দাম অনেক নি¤œগামী মানুষ সাধ্যের মধ্যে পছন্দনীয় গরু প্রত্যাশিত দামেই কিনতে পারছে এবং এই দাম আর চড়া হওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। কারণ অনেক ক্রেতাই পাহাড়ে আগেই গরু কিনে রেখেছে।