॥ মোঃ আবদুল নাঈম মোহন ॥
রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে মাইকে প্রচার চালিয়ে ভোট চাওয়া হচ্ছে পুরো শহরজুড়ে। জনপ্রিয় বিভিন্ন সুর নকল করে চলছে প্রার্থী ও মার্কার জয়-জয় গান। ভোটের মাঠের এসব গানে রাঙামাটি পৌর এলাকার অলি-গলি সরগরম। আর তাতে ভোটের আমেজ আসলেও, লাগাতার মাইকের উচ্চ শব্দ বিরক্তি তৈরি করছে ভোটারদের।
“আইলো গেল কত ভাই, উন্নয়নের বালাই নাই, অমুক ভাই, তমুক ভাই, চলেন সবাই ভুইলা যাই, ……ভাইয়ের সালাম নিন….মার্কায় ভোট দিন, …..নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়ন …..ভাইয়ের দুই নয়ন”। অন্যদিকে “………নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আপার কিছু কথা আছে, প্রভাবশালীর প্রভাবে জনগণের মনের ব্যথা, সন্ত্রাসবাদের আনাগোনা,
মাদকের আখড়া, দখলের কবলে এলাকা, নাই নাগরিক সুবিধা, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে নেই আলো, নিরাপত্তার বালাই নাই, জনগণের অধিকার পূর্ণ করার কী কেউ নাই”
মমতাজ, বেবী নাজনীনসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় শিল্পীদের গাওয়া নানা গানের সুর, তাতে এরকম নানা কথামালা বসিয়ে তৈরি করা গান নিয়ে দিন-রাত অলি-গলিতে বেজেই চলেছে, তাছাড়াও অনেক গানে বেশ অভিনবত্বও আছে।
নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে মাঠে ময়দান ও অটোরিকশা (সিএনজি) করে আরস্বরে অডিও বাজছে, ভোটের সংগীত ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়াতেও। র্যাপ স্টাইলে গানের সঙ্গে নাচও আমোদিত করেছে সোস্যাল মিডিয়াতে।
প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা সময় মাইকে প্রার্থী ও প্রতীকের জন্য ভোট ও দোয়া চাওয়া হতো। এই পুরোনো মাইকিং পদ্ধতির চেয়ে বর্তমানে গানে গানে ভোট চাওয়ার পদ্ধতি এলাকার ভোটারদের আকৃষ্ট করছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গাড়ি দিয়ে গানে গানে প্রচার চলাকালীন সময় পাড়ার নারী ও শিশুরা বের হয়ে আগ্রহ নিয়ে দেখেন এবং আনন্দও করে। এদিতে পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থীর পক্ষে কেউ কেউ নতুন গান বাঁধছেন আবার কেউ কেউ জনপ্রিয় গান-গুলোর সুর ঠিক রেখে কথাগুলো প্রার্থীর নাম. প্রতীক বসিয়ে দিয়েছেন। সুমধুর কন্ঠসর মানুষ দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গান গাওয়াচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকে গান রেকর্ড করে তা বাজাচ্ছেন। এসব প্রচারণা আকৃষ্ট করছে ভোটারদের।
পৌর এলাকার একজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গানের ছন্দে প্রচার ভালোই লাগে, তবে বিরক্তি লাগে যখন সুন্দর একটি গানের সুর বিকৃত করে গাওয়া হয়। তবে গানে গানে একটি উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে সকাল ৮টা থেকে রাত প্রায় ৯-১০টা পর্যন্ত মাইকের উচ্চ শব্দে বিরক্ত লাগে, ছেলে-মেয়েদের পড়া শুনার ক্ষতি হয়, মাইকের শব্দের কারণে বইয়ের মধ্যে তাদের মন বসে না। তাছাড়া বাসায় বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ্য মানুষ থাকতে পারে তাদের কথাও তো প্রার্থীদের চিন্তা করতে হবে, সে-দিন দেখলাম মসজিদের মাইকে আজান চলছে, অন্যদিকে মাইকিং হচ্ছে অমুক ভাইয়ের দু’নয়ন এলাকাবাসীর উন্নয়ন, তাই প্রার্থীদের অনুরোধ করবো আপনারা যাদের কে মাইকিং করার দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা যেন পাড়া-মহল্লায় আসলে মাইকের সাউন্ড কমিয়ে মাইকে প্রচারণা করে, মসজিদের-মাদ্রাসার বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে যেন মাইকিং কম করে, প্রার্থীদের মনে রাখা দরকার যে, নির্বাচন প্রচার-প্রচারণার সময় মানুষ যদি কোন কারণে কষ্ট পায়, তাহলে আপনার পক্ষ সাধারণ ভোটার থাকবে না, মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এত প্রচারণা, দেখা যাবে আবার এ ধরনের প্রচারের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে আপনি ঘৃণার পাত্র হয়ে গেছেন।
আইনে লেখা শাস্তির কথাঃ- গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য এই উৎসবের আমেজ খুবই জরুরি, কিন্তু সুর নকল করে তৈরি এসব নির্বাচনী গানে যে মেধাস্বত্ত্বের বালাই থাকছে না। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, কোন গানের সুর বিকৃতি বা কথা পরিবর্তন করে মন মতো গান প্রচার করলে তা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। এর শাস্তি হিসেবে ৬ মাস থেকে ৪ বছর কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।