॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর বৌদ্ধ মন্দির রাঙামাটির রাজবন বিহারে ৩-৪ নভেম্বর দু’দিনব্যাপী পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ থাকার কারণে এবারের দানোৎসব ঘিরে পুরো পাহাড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। এ দানোৎসবে তিন পার্বত্যজেলার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি অনেক বিদেশী বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এবং ধর্মযাজক এ উৎসবে যোগ দিবেন।
এ দিকে এবারের উৎসব ঘিরে বাড়তি সতর্কতার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভক্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখতে নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
বিহারের আশ-পাশ পরিষ্কার পরিছন্ন, সাজ-স্বজ্জা, বেইন ঘর প্রস্তুতি এবং প্যান্ডেল সাজানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূর্ণার্থীরা যাতে শান্তি নির্বিঘেœ পূজা অর্চনার কাজ শেষ করতে পারে তার জন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো বিহার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা ।
পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। মেডিকেল টিম, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত থাকবে।
রাঙামাটি রাজবন বিহার শাখার উপাসক-উপসিকা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়- কঠিন চীবর দানোৎসবের জন্য সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। বিহার এলাকায় সাজ-স্বজ্জার কাজ চলছে। আগামীকালের মধ্যে বাদবাকী কাজ শেষ হয়ে যাবে। ০৩নভেম্বর থেকে সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হবে পুরো মন্দির এলাকা এবং ০৪নভেম্বর চিবর দানের মধ্যে দিয়ে পাহড়ে মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব কঠিন চিবর দানের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রচলন হয় কঠিন চীবর দান। গৌতম বুদ্ধের তৎকালীন শীর্ষ বিশাখা দেওয়ান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরী করে সে সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে কোমর তাঁতে চীবর বুনে তা গৌতম বুদ্ধকে দান করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। চীবর হচ্ছে ভিক্ষুদের পরিধীয় বিশেষ রঙ্গিন কাপড়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরীর কঠিন কাজটি সম্পাদন করতে হয় বলে একে কঠিন চীবর দান বলা হয়। বৌদ্ধদের বিশ্বাস কঠিন চীবর দান করতে পারলে ইহকাল ও পরকালে নির্বাণ তথা মুক্তি লাভ করা সম্ভব। পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এ উৎসব পালন করে প্রাচীন নিয়মে।
বাড়তি সতর্কতার দাবি জানিয়ে রাঙামাটি সাংবাদিক হিমেল চাকমা তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ‘৩ নভেম্বর রাতে রাঙামাটি স্টেডিয়াম গ্যালারীতে জন সাধারণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করুন’। তিনি বলেন, ৩ নভেম্বর রাতে বেইন বুনা হবে। গত দু বছর পর এ অনুষ্ঠান হচ্ছে। এ অনুষ্ঠান সফলভাবে শেষ করতে প্রতি বছর স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এবারও হয়ত এর ব্যাতিক্রম হয়নি। কিন্তু প্রত্যক বছর অরক্ষিত থাকে রাঙামাটি মারী স্টেডিয়াম গ্যালারী।
প্রত্যক বছর এ স্টেডিয়াম গ্যালারীতে পেটে-বুকে ছুরি চালাচালি হয়। মারামারি হয়। ধাওয়া হয়। এতে অনেকে আহত হয়। অনেকে পঙ্গু হয়। অনেক মেয়ের শ্লীলতাহানী হয়। শ্লীলতাহানীর শিকার মেয়েরা লজ্জায় কারো কাছে বিষয়টি বলতে পারে না। এরা ট্রমাটাইজে ভুগে।
এ একটি রাত অনেক মেয়ের জীবন একেবারে ধংস করে দেয়। এ রাতে আপনার আমার কারোর ছেলে বা মেয়ের মৃত্যুও হতে পারে। কারণ এদিন বখাটেরা বেশ সবল থাকে এ স্টেডিয়াম গ্যালারীগুলোতে। বিভিন্ন দুর্বলতা খুঁজে এরা সবকিছু কেড়ে নেয়। অতীতের অনেক ঘটনা আছে।
তিনি লিখেন, ‘রাজবন বিহার কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ প্রশাসনকে অনুরোধ করুন ৩ নভেম্বর রাতে যেন স্টেডিয়াম গ্যালারীতে জন সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। অবিভাবকদের অনুরোধ বেইন বুনা দেখার কথা বলে আপানার ছেলে বা মেয়ে যেন রাতের অন্ধকারে গ্যালারীতে আড্ডা দিতে না যায় সেদিকে নজর রাখুন। যদি ব্যর্থ হন তাহলে দুর্ঘটনায় শিকার হলে দায় আপনার’।