॥ আলমগীর মানিক ॥
কোনো প্রকার নোটিশ, হুকুম দখল বা অবগত না করেই রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ব্যক্তি মালিকানাধীন (রেজিষ্ট্রিকৃত) জায়গায় ধারক দেওয়াল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের বিরুদ্ধে। ওই সড়কের সাপছড়ি এলাকায় বাস্তবায়নাধীন সড়ক বিভাগের এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে একটি প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ভূমির মালিক তার সমূহ ক্ষতির আশঙ্কায় কাজটি বাস্তবায়নে আলোচনা বা প্রতিকারের আবেদন জানালেও তার অভিযোগ আমলে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে নির্মাণ কাজটি চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক।
ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক আরফান আলী জানিয়েছেন, এ বিষয়ে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে তিনি লিখিত অভিযোগ জানানোর পর কাজটির গতি আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি কোনো প্রতিকার পাবেন না বলে আশঙ্কা করছেন, কারণ আরফান আলী বারবার অফিসে ধর্না দিলেও কেউ তার আকুতি আমলে নিচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি এলাকায় মূল সড়ক থেকে অন্তত ৯০ ফুট দূরে আরফান আলির দাবিকৃত ভূমির অবস্থান; যা তার রেজিষ্ট্রিমূলে খরিদা সম্পত্তি। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে ১০.৪ ফুট প্রস্থের ৬০ ফুট লম্বা রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের বেইজ ঢালাই করা হয়েছে। এবিষয়ে সেখানে উপস্থিত শ্রমিকরা এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই’র সাইট ইঞ্জিনিয়ার রোমান এর যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, হয়তো আরফান সাহেবের দাবিকৃত জায়গার কিছু অংশে ওয়ালটি পড়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, আমাদেরকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছে রাঙামাটি সড়ক বিভাগ। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজটি করছি, কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নিকট অভিযোগ জানাতে পারেন। অফিস থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা কাজ চালিয়ে যাবো।
জায়গার মালিক দাবিদার আরফান আলী জানিয়েছেন, ১০৯নং সাপছড়ি মৌজা, উপজেলা-রাঙামাটি সদর, হোল্ডিং নং-১২৪জ/২৮৪/৫৫১, জমির পরিমাণ ২ একর। আমি ক্রয়সূত্রে এর মালিক। আমার মায়ের চিকিৎসাজনিত কারনে বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। এই সুযোগে সড়ক বিভাগের নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই আমার জায়গার উপর রাতারাতি মেশিন লাগিয়ে অল্পসময়ের মধ্যেই মাটি কেটে বিশাল আকারের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি ঘটনা শুনেই দ্রুত ঢাকা থেকে এসে কাজ বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে ০৫/০১/২০২৩ ইং তারিখে একটি লিখিত আবেদন জানাই। তারা আমাকে ই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে বলে মৌখিকভাবে আশ^স্ত করলেও মাত্র তিনদিনের মধ্যেই উক্ত জায়গায় ১০.৪ ফুট প্রস্থের ৬০ ফুট লম্বা বেইজ ঢালাই করে ফেলে। সহায় সম্বল হারানোর আশঙ্কায় আমি সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বারবার ধর্না দিলেও তারা আমার কথায় কোনো ধরনের কর্ণপাত করছে না। এখন দেখা যাচ্ছে আমার আদালতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আদনান ইবনে হাসান জানিয়েছেন, আমরা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কটি রক্ষায় এই রিটেইনিং ওয়ালটি নির্মাণ করছি। কাজটি একমাসেরও অধিক সময় ধরে চলছে এতদিন কেউ অভিযোগ দেয়নি। আমাদের লক্ষ উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা কারো জমি দখল করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরাতো এই জমিটি নিজেদের বলে দাবি করছিনা। কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় তাকে অবহিত নাকরে কিভাবে কাজ শুরু করলেন এবং এতে উক্ত ব্যক্তি অদূর ভবিষ্যতে তার জায়গায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে আদৌ পারবে কিনা? জবাবে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বলেন, আরফান আলী নামের একজন আমাদেরকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা আপাতত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। তার সাথে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রসঙ্গত; ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলার বিভিন্ন সড়ক। এতে রাঙামাটির সাথে কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া-বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর উদ্যোগে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত এবং পাহাড় ধস প্রতিরোধে ২৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়কের মোট ১৫১টি স্পটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন রয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে মোট নিরাপত্তা দেওয়াল রয়েছে ৫ হাজার ৪৭০ মিটার ও ড্রেন হচ্ছে ৭ হাজার ৭৩৫ মিটার। পাহাড় ধস প্রতিরোধক কংক্রিট ঢালাই হচ্ছে ৭২ হাজার ১৫০ বর্গ মিটার। এরমধ্যে ৫ মিটার উচ্চতার নিরাপত্তা দেয়াল হবে ৫১ টি স্পটে, ৬ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং হবে ৭৩টি স্পটে। ৭ মিটার উচ্চতার নিরাপত্তা দেয়াল হবে ২৭টি স্পটে। পাইল ফাউন্ডেশনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২-১৮ মিটার।
এদিকে রাঙামাটির সড়কগুলো রক্ষায় প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিই কর্তৃক নির্মানাধীন রিটেইনিং ওয়ালগুলো স্থানীয় ভূমির মালিকদের সাথে আলোচনা নাকরেই হুটহাট করে কাজ শুরুর অভিযোগ উঠেছে। রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির টেক্সটাইল মার্কেট এলাকায় এই ধরনের একটি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের পরপরই উক্ত স্থানটিতে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে আরফান আলীর মালিকানাধীন জায়গায়ও কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই ক্ষমতার দাপটে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ আরফান আলী আদালতের দ্বারস্ত হয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন বলে জানিয়েছেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সড়ক বিভাগের খামখেয়ালীতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই উন্নয়ন কাজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।