॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥
“টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইউএনডিপি এসআইডি এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “উইমেন এন্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু এডুকেশন এন্ড স্কিলস” প্রকল্প এবং ৪টি স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রেসিভ, উইভ, টংগ্যা ও হিল ফ্লাওয়ার-এর উদ্যোগে ৮ মার্চ ২০২২ ইং রাঙামাটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে “আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২” উদযাপিত হয়।
“আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২” উদযাপনের অংশ হিসাবে রাঙামাটি আউটার স্টেডিয়াম এর খোলা চত্বরে জুম ঈসথেটিক কাউন্সিল (জাক) থিয়েটার দলের পরিবেশনায় পথনাটক পরিবেশিত হয়।
এরপর নারী-পুরুষ-যুব-কিশোর নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য র্যালি রাঙামাটি আউটার স্টেডিয়াম চত্বর/প্রাঙ্গণ থেকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এসে সমাপ্ত হয়ে পরিষদের সভাকক্ষে আলোচনাসভায় মিলিত হয়।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই র্যালির সম্মুখভাগে উইভ সংস্থার ”উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু লার্নিং লিডারশিপ” প্রকল্পের আওতায় গঠিত সাইক্লিস্ট দল বাইসাইকেল র্যালিতে অংশ নেয়। এর পাশাপাশি মার্শাল আর্ট দলের যুব ও কিশোরি দলের সদস্যরাও তাদের নজরকাড়া বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করে। এসময় র্যালিতে অংশগ্রহণকারীগণ নারী দিবসের তাৎপর্য সম্বলিত রংবেরঙের ফেস্টুন ও প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে পরিষদের সভাকক্ষে পরিষদ সদস্য ঝর্ণা খীসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন একটিভিস্ট ফোরাম এর সভাপতি টুকু তালুকদার এবং সদর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি’র এসআইডি সিএইচটি ক্লাস্টার চীফ মিজ ঝুমা দেওয়ান, নেটওয়ার্ক ফর এডলেসেন্ট রাইটস ইনিসিয়েটিভস (নারি) এর সাধারণ সম্পাদক ও উইভ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নাই উ প্রু মারমা, বিএনপিএস এর লিয়াজোঁ অফিসার শরীফ চৌহান এবং স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা প্রোগ্রেসিভ এর নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন,পূর্বে নারীদের শুধুমাত্র মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত করা হত। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সদিচ্ছায় নারীদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণায়লয়, জাতীয় সংসদসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন এতকিছুর পরও এখনও নারীরা তাদের অধিকারের প্রশ্নে সংশয়ে রয়েছেন। তাই আমাদের বিশেষ করে পুরুষদের উচিত নারীদের সংশয় দূর করে নারীর অধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তা করা। তিনি নারী কার্বারী শান্তনা খীসার দাবীর প্রেক্ষিতে তাঁর মৌজায় নারী কার্বারী নিয়োগ করার এবং জেলার নারী কার্বারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়নে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ অর্থ বরাদ্দ রাখবে এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাবে। তিনি নারী দিবসের আয়োজনকারী সহযোগি সংস্থা এবং অংশগ্রহণকারী সকলকে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সদস্য ঝর্ণা খীসা বলেন,করোনাকালীন সময়ে নারীদের কার্যক্রম সমুন্নত রাখতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নারী উদ্যোক্তাদের বিশ হাজার টাকা করে প্রণোদনা প্রদান করেছে। এ প্রণোদনা নারীদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন জেলা পরিষদ নারীর দক্ষতা উন্নয়নে ড্রেস মেকিং এবং টেইলরিং, ফুড এন্ড বেভারেজ, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তিনি আশা করেন এতে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল “নারী ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান”। এবছর করোনাকালীন সময়ে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মনিরা পারভীন মনিকে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তনা খীসাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
আলোচনাসভায় সিমাভি-বিএনপিএস এর “আওয়ার লাইভস আওয়ার হেল্থ আওয়ার ফিউচারস” প্রকল্প, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তাপুষ্ট “উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট থ্রু লার্নিং লিডারশীপ”, নেটওয়ার্ক ফর এডোলেসেন্ট রাইটস ইনিসিয়েটিভ (এনএআরআই) ও উইমেন এক্টিভিস্ট ফোরামসহ জেলা গার্লস গাইড, উন্মেষ, নারী হেডম্যান ও কার্বারী নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন ও নেটওয়ার্ক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।