॥ ইকবাল হোসেন ॥
নিবন্ধনের সকল শর্তপূরণ এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে আবেদনের পরও রাঙামাটি শহরের একটি শ্রমিক সমিতির নিবন্ধন প্রক্রিয়া ব্যক্তিগত ইচ্ছায় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে জেলা সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
রাঙামাটি ফার্নিচার বাহক শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের এই সংগঠনটির নিবন্ধন আটকে রাখতে গিয়ে তিনি যেমন আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন করেননি, তেমনি অগ্রাহ্য করেছেন সমবায় অফিসের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশসহ স্থানীয় এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অনুরোধও।
সবার বিরুদ্ধে গিয়ে সামান্য কিছু সুবিধা গ্রহণের জন্য অবাধ্য হওয়া এই কর্মকর্তার খুটির জোর কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। প্রস্তাবিত সমিতির সভাপতি মোঃ আবু বক্কর লিটন ও সাধারণ সম্পাদক জে কে এম হিরো তালুকদার জানান, বর্তমান সরকার সমবায় কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা দুই বছর আগে আসবাবপত্র শ্রমিকদের নিয়ে এই সমিতির কার্যক্রম শুরু করেন। এবং বিধি মোতাবেক নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ২৫জন সদস্য নিয়ে গঠিত এই সমিতি নিবন্ধনের জন্য সকল কাগজপত্রসহ বিগত ২০সেপ্টেম্বর তারিখে রাঙামাটি সদর উপজেলা সমবায় অফিসে আবেদন জমা দেন।
আবেদনে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর লিখিতভাবে সুপারিশ করেন। আবেদনের পর ‘প্রস্তাবিত রাঙামাটি ফার্নিচার বাহক শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এর সকল কাগজপত্রের সঠিকতা যাচাই পূর্বক উপজেলা সমবায় কার্যালয় ইতিবাচক প্রত্যায়ন প্রদান করে জেলা কার্যালয়ে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেন।
কিন্তু বার বার যোগাযোগ করার পরও জেলা সমবায় অফিস রহস্যজনক কারণে আবেদনটি আটকে রেখেছে। আবেদনকারী ফার্নিচার বাহক সমিতির নেতারা জানান, আমরা অবগত হয়েছি যে, একটি সমিতির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে ফাইলটি আটকে দেন।
শ্রমিক নেতারা আরো জানান, আবেদনের পর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী মৌখিকভাবেও জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে এই নিবন্ধনটি অনুমোদন করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তারপরও তিনি কালক্ষেপর করায় তারা গণমাধ্যমের দারস্থ হন।
বিষয়টি সরেজমিনে খোঁজ খবর নিতে গেলে (১০ নভেম্বর) উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আশীষ কুমার চৌধুরী জানান- আমি রাঙামাটি ফার্নিচার বাহক শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের আবেদন পাওয়ার পর সকল কাগজপত্রের বৈধতা যাচাই বাছাই শেষে ২২ সেপ্টেম্বর সমবায় সমিতি বিধিমালা/২০০৪ এর ১২(১) বিধিমতে প্রস্তাবিত সমিতিরি কর্ম এলাকায় অনুরূপ নামে কোন সমবায় সমিতি নাই বিধায়- ‘সাংঘর্ষিক হবে না’ মর্মে প্রত্যায়ন প্রদান করে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জেলা অফিসে প্রেরণ করেছি। কিন্তু জেলা সমবায় অফিস কেন অনুমোদন দিচ্ছেনা তা আমার জানা নেই।
একই দিন ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার জেলা সমবায় কর্মকর্তা মৌসুমি ভট্টাচার্য এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশের বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু এরপরই তড়িঘড়ি করে তিনি বন্ধের দিন আবেদনটি উপজেলা কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠান। এরপর থেকে তিনি তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন, তার অফিসিয়াল মুঠোফেন ০১৫৫০৬০৭৫৭১ এ শুক্রবার কথা বলা গেলেও তিনি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। রোববার দুইবার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সোমবার জানা যায় তিনি ছুটি নিয়ে কর্মস্থলের বাইরে রয়েছেন।
রোববার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সুহৃদ চাকমা স্বীকার করেন যে, ‘শনিবার তিনি জেলা অফিস থেকে পাঠানো ফেরত ফাইলটি পেয়েছেন’। আবেদন জমা দেওয়ার ৫৪ দিন পর ফাইলটি ফেরত পাঠানো হলেও চিঠিটি ইস্যু তারিখ দেখানো হয় এক মাস আগের। যদিও আইন অনুযায়ী কোনো আবেদন না মঞ্জুর করলে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে লিখিতভাবে জানানোর বিধান রয়েছে।
বিধি অনুযায়ী, সমবায় সমিতি নিবন্ধন আইনের (২) উপ-ধারা ১ এর অধীন পেশকৃত আবেদন সম্পর্কে নিবন্ধক যদি সন্তুষ্ট হন যে, আবেদনকারী সমিতি এই আইন ও বিধি অনুযায়ী নিবন্ধনযোগ্য একটি সমবায় সমিতি, তবে তিনি আবেদনটি প্রাপ্তির ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে তা মঞ্জুর করে নিবন্ধন সনদ ইস্যু করবেন অথবা না মঞ্জুরের কারণ উল্লেখপূর্বক উক্ত সিদ্ধান্ত ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিবেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অফিসিয়ালি আবেদনকারীদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। আবেদনকারী নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, স্থানীয় অপর একটি সমিতির যোগসাজশে জেলা সমবায় কর্মকর্তা তাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন; যদিও তাদের বিষয়ে উপজেলা অফিসের ইতিবাচক প্রতিবেদন রয়েছে। নেতৃবৃন্দের দাবি এমপি, চেয়ারম্যান ও নেতাদের অনুরোধ উপেক্ষা করার মতো সাহস দেখানো এই কর্মকর্তা কি সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।