রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন : কোন্দলের কারনে প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ বিএনপি

751

DR SOLAYMAN

মোহাম্মদ সোলায়মান- নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক রাঙামাটি : পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে রাঙামাটি পৌরসভায় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে রাঙামাটির প্রধান দুই রাজনৈতিক দলে চলছে নানা টানা পোড়ন। আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে সরকার দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। আর বিএনপিতেও প্রার্থীতা নিয়ে দেখা দিয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। সোমবারের মধ্যে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রার্থীর তালিকা পাঠানোর কথা রয়েছে। আর বিএনপি রবিবার রাতেই প্রার্থী বাছাই অনেকটা চুড়ান্ত করেছে বলে দলীয় সুত্রে জানা গেছে। এদিকে আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ইতোমধ্যে তাদের সমর্থিত একক প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে।

দলীয় সুত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন সাতজন করে । এসব প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়ন চুড়ান্ত করতে রাঙামাটি বিএনপি একটি সার্চ কমিটি গঠন করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী চুড়ান্ত করা অনেকটা জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের উপর নির্ভর করছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবকে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের সীদ্ধান্তেই চুড়ান্ত হবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন। রাঙামাটি আওয়ামী লীগে হেভি ওয়েট কয়েকজন প্রার্থী থাকলেও দলের অভ্যন্তরে নানামুখি কোন্দলের কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে দলকে।

এদিকে রাঙামাটি বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি সাতজন থাকলেও রোববার পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেন। সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন বর্তমান মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টো, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম সাকিল, পৌর বিএনপির সভাপতি শফিউল আজম ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি আবু সাদাৎ মোঃ সায়েম ও বর্তমান কাউন্সিলর রবিউল আলম রবি। মনোনয়ন সংগ্রহকারী এ পাঁচজনকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ধরে নিয়ে রাঙামাটি জেলা বিএনপির বাছাই কমিটি রোববার রাতে বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে। দলীয় একটি সুত্র জানায় বর্তমান মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টো ও যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম শাকিলকে প্রাধান্য দিয়ে কেন্দ্রে প্রার্থীর তালিকা পাঠানো হবে। এদিকে রাঙামাটি বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আগে থেকে প্রচারনায় থাকা পৌর কাউন্সিলর রবিউল আলম রবি গতকাল পর্যন্ত মনোনয় পত্র গ্রহণ করেননি। সে ক্ষেত্রে তিনি দলীয় বাছাই কমিটির হিসেবের বাইরে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে রবিউল আলম রবি জানান, মনোনয়নপত্র না কিনলেও তিনি ইতোমধ্যে দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত দলের উপর আস্থা রাখতে চান উল্লেখ করে বলেন, দল থেকে মনোনয় না পেলে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিবো।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দীপু তালুকদার বলেন, মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী পাঁচ জনের সকলেই দলের কাছে যোগ্য প্রার্থী। তারপরও বিজয়ের স্বার্থে দল যাছাই বাছাই করে একজনকে মনোনয়ন দেবে। দলীয় পদে থেকে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

্এদিকে জেলা আওয়ামী লীগে এখনো কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র না কিনলেও মনোনয়ন প্রত্যাশি সকলে দলের সীদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। অধিকাংশ প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে জানা গেলেও কোন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন কিনা তা খোলাশা হয়নি।  তবে সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান, গতবারের প্রতিদ্বদ্বি আব্দুল মতিন ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মোঃ সোলায়মান প্রার্থী তালিকায় গুরুত্ব পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্র থেকে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাঙামাটি আওয়ামীলীগের প্রধান সমস্যা দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অভ্যন্তরীন কোন্দল। এ ছাড়াও এবারে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন দল ও দলের জেলা সভাপতি দীপংকর তালুকদারের জন্য ইমেজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয়ের পর রাঙামাটি পৌর নির্বাচন দীপংকর তালুকদারের জন্য চ্যালেঞ্জ। দলের মধ্যে জেলা সভাপতির বিরোধীতাকারী একটি অংশ, চিটাগাং ননচিটাগং ইস্যু, মহিলা সংসদ নিয়ে বিতর্ক ও জেলা পরিষদের রদবদলকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে রয়েছে পুুরোনো কোন্দল। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এসব বিষয় ভাবিয়ে তুলছে দলের হাই কমান্ডকে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতাব্বর গত নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে স্বীকার করে বলেন এবার রাঙামাটি আওয়ামী লীগে কোন কোন্দল নেই। যাচাই বাছাই করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া বলে তিনি জানান।

– শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান। পোস্ট- ২৯ নভেম্বর ২০১৫