রাঙামাটি শহরের অদূরে আবারও দিনে দুপুরে কাঠবাহী ট্রাকে সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ

159

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

আবারও রাঙামাটি শহরের অদূরে প্রধান সড়কের পাশে কাঠবাহি ট্রাকে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার সকাল সোয়া নয়টার দিনে-দুপুরে এই হমলা চালানো ঘটনায় রাঙামাটিতে উত্তেজনা দেয় এবং চালকরা ঘন্টাব্যপী সড়ক অবরোধ করে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের দেপ্পোছড়ি এলাকায় এই গুলি বর্ষণের ঘটনায় ট্রাকের চালক ছৈয়দ আলম গুরুতর আহত হন, তার বামপায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় চট্ট-মেট্রো-ট-১১০৭৯৯ ট্রাকের সামনের দু’টি চাকা গুলিতে ফেটে যায়।

ট্রাকে থাকা কাঠের চালানদার জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সকালে আমরা রাঙামাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়ার পর দেপ্পোছড়ি এলাকার পৌঁছুলে রাস্তার ডান পাশের জঙ্গল থেকে আকস্মিকভাবে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। এতে ট্রাকের দুই চাকা ফেটে যায় এবং গাড়ির বডি ছিদ্র হয়ে চালকের পায়ে গুলি লাগে। তবে চালক ধৈর্য্যরে সাথে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়। পরে আমি চালককে নিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চলে আসি।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শওকত আকবর জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ছৈয়দ নামের একজন চালককে হাসপাতালে আনার সাথে সাথেই আমরা তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেছি এবং তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুল আমিন।

এদিকে কাঠবাহি ট্রাকে সন্ত্রাসীদের গুবর্ষণ ও চালক আহত হওয়ার ঘটনায় রাঙামাটি শহরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ চালকরা। ঘন্টাব্যাপি এই অবরোধের পর প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য ২৪ ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেয় চালকরা।

মঙ্গলবার বেলা এগারোটা থেকে রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করে রাঙামাটি শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিক্ষুব্ধ ট্রাক চালকরা। এসময় বিপাকে পড়েন সড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ। অবরোধের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল জাহিদুল ইসলাম, কোতয়ালী থানার ওসি আরিফুল আমিনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন।

অবরোধকারীরা নিজেদের নিরাপত্তাা নিশ্চিত করতে পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, এঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারসহ নান ধরণের স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর ঘুরে ট্রাক টার্মিনালের সামনে এসে সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. সেকান্দর হোসেন চৌধুরী, ট্রাক-মিনিট্রাক- পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, বর্তমান সভাপতি এটিএম হাসমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতারা। সমাবেশে বক্তারা দোষীকে গ্রেফতার করতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন এবং প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরের ২৫শে জানুয়ারী এই দেপ্পোছড়ি এলাকায় কাঠবাহি চলন্ত ট্রাকে ব্রাশ ফায়ার করে পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা। তারও আগে গত বছর ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আসামবস্তি কাপ্তাই সড়কের বড় আদমের তঞ্চঙ্গ্যাপাড়ায় জেএসএস এর সহকারী কমান্ডার বিপ্লব চাকমা এবং কালেক্টর রিটন চাকমার নেতৃত্বে আনুমানিক ১০ সদস্যের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদা পরিশোধ না করায় ০৬টি সিএনজি অটোরিকশা এবং ০১টি পাথর বোঝাই ট্রাক আটক করে।

পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর দুইটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সিএনজি অটোরিক্সাগুলো উদ্ধার করে। গতবছরের ১৬ই সেপ্টেম্বর রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে চাঁদার দাবিতে আরো একটি অটোরিক্সা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা। রাঙামাটি শহরের অদূরেই এই ধরনের সশস্ত্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।