রাঙ্গামাটিতে জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের কর্মশালা

124

জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন আয়োজিত “এডভান্সিং ইয়ুথ এক্টিভিজম টু এড্রেস জেন্ডার-বেইসড ভায়োলেন্স” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথভাবে এতে সহায়তা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইউএনডিপি, সিআরআই এবং ইয়ং বাংলা।

৯ ডিসেম্বর শুক্রবার, আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (আরপিটিআই), রাঙ্গামাটি মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিকগণ, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও পরিবহন সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণীপেশার অংশীজনেরা অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালার শুরুতেই জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক সাজিদ-বিন-জাহিদ (মিকি) তার সঞ্চালনায় নারীর নিরাপদ অগ্রযাত্রা নিশ্চিতে “উইমেন সেইফটি ইন পাবলিক প্লেস” ক্যাম্পেইনের ভূমিকা তুলে ধরেন। এতে অংশগ্রহণকারীরা গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে নিজ নিজ জায়গা থেকে সমাধান ও প্রস্তাবনা পেশ করেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও ইয়াং বাংলা পরিচালিত ডাব্লিউএসপিপি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই কর্মশালাটা আয়োজন করা হয়। এই কর্মশালাটির মূল লক্ষ্য ছিলো, নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশেষভাবে নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চেতে সম্মেলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।

মূল উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮.২ এবং ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনের সবক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ অনুযায়ী শ্রমবাজার ও কর্মক্ষত্রে সমান অধিকারসহ সব ধরনের জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে প্রতীয়মান যে, জনস্থানে নারী ও মেয়ে শিশুদের ওপর হয়রানি বন্ধে বিদ্যামান আইন ও নীতিমালা গুলো যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশের জনস্থানে (পাবলিক প্লেস) শতকরা ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশুর যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের ৬৬ শতাংশ জীবনে একবার হলেও এসব স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর ৭ শতাংশ প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন।
জনস্থানে নারীর নিরাপত্তায় ইয়াং বাংলা, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), ইউএনডিপি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ২৪ জেলার প্রতিটি থেকে ২০৮ জন নারী ও কন্যাশিশুকে নিয়ে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অনলাইনে এই সমীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সাধারণত ৪২ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশুরা জনস্থানে ইভটিজিংয়ের শিকার হন। এ ছাড়া ১৭ শতাংশ অশালীন আচরণের সম্মুখীন, ১২ শতাংশ শারীরিক বিভিন্ন স্থানে অবাঞ্ছিত স্পর্শ অনুভব ও ১১ শতাংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন।
৫১৮৭ টি প্রতিক্রিয়া থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, নারী ও কন্যাশিশুরা সব থেকে বেশি
যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন গণপরিবহনে। জরিপে অংশ নেয়া ৩৬ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু বাস, ট্রেন বা লঞ্চে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ২৩ শতাংশ নারী রাস্তা-ঘাটে, ১১ শতাংশ মার্কেট বা শপিং মলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এসময় অংশগ্রহণকারী সদস্যরা বলেন, জনসমাগম স্থল ও চলার পথকে নারীদের জন্য নিরাপদ করতে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। একজন নারীর নিরাপত্তা ও চলার পথকে মসৃন করতে হলে, তাঁকে অবশ্যই উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ তরুণ সমাজ ও নাগরিকদের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে ইউএনডিপি এর মানবাধিকার প্রকল্পের কমিউনিকেশন এনেড এডভোকেসি এক্সপার্ট অলি মোঃ আব্দুল্লাহ চৌধুরী এই কর্মশালার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও জনস্থানে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুধী সমাজের পাশাপাশি অংশীদারদের জোড়ালো ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম বলেন, “জনস্থানে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ তরুণ সমাজ ও নাগরিকদের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা অতীব জরুরী।”

রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা রাঙামাটি পৌর এলাকাকে নারীর জন্য শতভাগ নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সড়কের দু’পাশে সোলার লাইট, ৯টি ওয়ার্ডের পাবলিক টয়লেটগুলোর সংস্কার, নারী বান্ধব ফুটপাত নির্মান এবং ভবিষ্যতে বাজারগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে যেখানে কিচেন মার্কেট মূল বাজার থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই বনরুপা কাঁচা বাজারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। “

জাতীয় জীবনে নারী ও কন্যা শিশুদের হয়রানি ও সহিংসতা বিষয়ে নিরবতা ভাঙ্গা, সময়ের সাথে সাথে আচরনে ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা, ভুক্তভোগী ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহিংসতা বন্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করা, অপরাধীদেরকে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট বার্তা দেয়া এই কর্মশালার অন্যতম লক্ষ্য।

জীবন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত কর্মশালায় অতিথি হিসেবে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক, রাঙ্গামাটি জেলা অটোরিকশা ও পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুন্না সহ স্থানীয় যুব সংগঠনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।