রাজনৈতিক ব্যক্তিকে টাকা নয় রাজনীতি করতে দিতে হবে: দীপংকর তালুকদার এমপি

134

মেহেদী ইমামঃ 

রাজনৈতিক ব্যক্তিকে টাকা নয়, বরং রাজনীতি করতে দিতে হবে। উচ্চাভিলাষ আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে সহিংসতা সৃষ্টি করা যাবে না। এমনটা প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বক্তব্যে এমনটাই জানিয়েছেন দীপংকর তালুকদার এমপি।

শনিবার (১৩ই মে) সকালে রাঙামাটির নানিয়ারচরে উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৯৯আসনের সাংসদ দীপংকর তালুকদার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য হাজি মোঃ মুসা মাতব্বর, সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদীব কান্তি দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দোহা চৌধুরী এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুর রহমান।

নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আনসার আলী, সুজিত তালুকদার, ফারুক মৃধা, ধর্মেশ খীসা, বাবুল কর্মকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুল হক, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুন ভুঁইয়া, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট দর্শন চাকমা ঝন্টু, সহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যে সম্প্রতি নানিয়ারচরে ঘটে যাওয়া দলীয় শৃঙখল ভঙ্গের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে দীপংকর তালুকদার বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জরুরী ভিত্তিতে জেলা আওয়ামী লীগ নানিয়ারচরে আসতে হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আজ আমরা এসেছি।

মুসা মাতব্বর ও শামসুদ্দোহা চৌধুরীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন। আজ থেকে ২৭/২৮বছর আগে যারা ছাত্রলীগ করত তারা আজ আমার সফরসঙ্গী হয়েছেন এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।

তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্র করে জনপ্রতিনিধি হওয়া যাবে না। যোগ্যতা থাকতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ, ব্যক্তিগত লোভ ও ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ আমাদের মাঝে দ্বন্দ সৃষ্টি করে। কে কি করে দিবে সেটা আসল বিষয় নয়।
রাজনৈতিক ব্যক্তিকে টাকা নয় বরং রাজনীতি করতে দিতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে প্রলোভন দেখানোর অর্থ হলো তাকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যখন টাকার পেছনে ছোটে তখন তিনি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনার তদন্ত করা হবে। দোষি সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দিন শেষে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলেও জানান এই সংসদ সদস্য।

বক্তব্যে ত্রিদীব কান্তি দাশ বলেন, অনুষ্ঠানে বসে নিজের কাছে খুব অপমান বোধ করছি। ১৯৯১থেকে নানিয়ারচরে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি চট্টগ্রাম থেকে ছাত্র রাজনীতি করতাম। ৯১সালে আমি প্রথম দীপংকর তালুকদারকে দেখেছি। তখন থেকেই নানিয়ারচরে রাজনীতি করে আসছি। কখনো চিন্তাও করিনি নানিয়ারচরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। ৯১সাল থেকে আমি নানিয়ারচরে দায়িত্ব পালন করছি। সকল নেতাকর্মীকেই আমি চিনি। আমাকে একটা অংশে বিভাজিত করলে এটা সহ্য করা যায় না। আমি কখনো কারো বিরুদ্ধচারণ করিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঁচলে তবেই আমরা বাঁচব।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হামলার ঘটনা একটা নেক্কারজনক ঘটনা। আমি এই ঘটনায় ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। আমি চাই সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকেন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিব। কাদা ছোড়াছুড়ি করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। কারা এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাজি মোঃ মুসা মাতব্বর বলেন, রাজনীতিতে বিরোধ থাকবে। নেতৃত্বের জন্য এসব বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাই বলে কাউকে মারধর করতে হবে এটা কাম্য নয়। ওহাব সাহেবকে মারার অর্থ আমাকে মারা। নিজেরা মারামারি করে একে অপরের বিরুদ্ধে দূর্নাম ছড়াচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ড কারো জন্যই ভাল নয়।

তিনি আরো বলেন, ২৯৯নং আসনটি একটি বিপদজনক আসন। পার্বতাঞ্চলে রাজনীতি কেমন তা আমাদের বুঝতে হবে। জামাত বিএনপি ছাড়াও এই এলাকায় আমাদের আঞ্চলিক দল গুলোর সাথে রাজনীতি করে টিকে থাকতে হয়। দলের ভিতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

এসময় দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দোহা চৌধুরী বলেন, শান্তিচুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা আমাদের অভিভাবক জননেতা দীপংকর তালুকদার নানিয়ারচরের সন্তান। নানিয়ারচরে দলের এই বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া যায় না। দলের শৃঙ্খলা বিনষ্টে এখানে ভুত ঢুকেছে। একটা জায়গায় আমরা বার বার ভুল করে যাচ্ছি। কিছু হতে না হতেই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশ করে দেই। এসব তথ্য প্রকাশে পজিটিভ-নেগেটিভ কিছু বিষয় থাকে। এই কথা গুলো থেকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ফায়দা গ্রহন করে। ভোটের মাঠে আঘাত করার জন্য এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আমাদেরকে চিন্তা ভাবনা করে আগাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল ওহাব বলেন, যারা এই হামলা করেছে তারা কার ইন্দনে কার মদদে এসব করেছেন তাদেরকে সবাই চেনে। এভাবে হামলা করতে আপনাদের সাহস হয় কিভাবে? নানিয়ারচরে হামলা করে রাঙামাটি গা ঢাকা দেন। গত ৮মে যারা আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিয়ে আহত করেছেন। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এই ঘটনা থেকে জামাত বিএনপি ফায়দা লুটছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা সকলে বঙ্গবন্ধু সৈনিক। তাহলে আমাদের প্রতি এত বিভাজন কেন? সাংগঠনিক বিষয় গুলো কে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় রক্ষা করা উচিৎ। আমি জামাত বিএনপি থেকে রাজনীতি করতে আসিনি। ১৯৯৭সালে নানিয়ারচরে এসে আমি এই এলাকায় রাজনীতি শুরু করি। এর আগেও আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি।

বক্তব্যে ইলিপন চাকমা জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে আমি সভায় অংশগ্রহণ করি না। কিছুদিন আগে আমি সভাপতির একটা এসএমএস পেয়েছিলাম। ওই ম্যাসেজে একটা মিটিং এর কথা বলা হয়েছিল। আমি রোজা ও পাহাড়িদের বিজুর কথা উল্লেখ করে কদিন পরে সভা আহ্বান করতে বলি। কিন্তু জরুরী ভিত্তিতে ১৬তারিখ হঠাৎ কি নিয়ে মিটিং করতে হলো আমি জানিনা। সেদিন কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, সেটা আপনারা দেখেছেন। যারা নিয়মিত আসেন না। তারা সেদিন বিশেষ দাওয়াতে এক নেতার বাসায় দাওয়াতে উপস্থিত হয়েছেন। কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নে সেদিন ওই মিটিং এ উপস্থিত হয়ে রেজুলেশন করে আমাকে অব্যাহতি আবেদন করেছিলেন। সেটা আমার বোধগম্য নয়।

অনুষ্ঠানে আনসার আলী বলেন,
৯০এর দশকে নানিয়ারচরে আওয়ামী লীগ কমিটি করতে লোক পাওয়া যায়নি। আজ বিএনপি জামাত থেকে লোক এসে আওয়ামী লীগ ভরে গেছে। দলের ভিতর মতপার্থক্য থাকতে পারে। আমরা সবাই এক হয়ে দল কে সুসংগঠিত করি। অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু জেলা আওয়ামী লীগের। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির উপর হামলা। কে করাচ্ছে এই হামলা। ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতি শুরু হয়েছে এই নানিয়ারচরে। দুর্দিনের নেতাকর্মী কে মুল্যায়ন করা হচ্ছে না। যারা সভাপতির গায়ে হাত দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আনেক কথা বলতে আজ বিবেকে বাধা দিচ্ছে। প্রধান অতিথি মহোদয় কেই আজ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি কি অপরাধ করেছিলাম। আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৬দিন জেল খাটানো হয়েছে। ৮জন নেতাকর্মী সেদিন ক্ষতিগ্রস্ত হই। এই ধরনের রাজনীতি কেউ যাতে না করে আশাকরি জেলা নেতৃবৃন্দ সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

বক্তারা এসময় নানিয়ারচরে উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে দীপংকর তালুকদার কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান। নানিয়ারচর আওয়ামী লীগে যেন কোন অপশক্তি কাজ করতে না পারে সেদিক বিবেচনা করেই যেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান দলের নেতাকর্মীরা।