॥ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ॥
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে ‘দুর্ব্যবহারের’ অভিযোগে শাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ৩ ঘন্টা ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার পর প্রশাসনের তড়িৎ পদক্ষেপে রাঙামাটি শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভিসির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পান প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা ছাত্রাবাসের নানা সমস্যার কথা জানিয়ে সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা ভিসিকে অভিযোগ জানানোর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ড. সেলিনা আক্তার ছাত্রাবাস পরিদর্শনে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানায় ছাত্রাবাসের মেরামত কাজের জন্য ৩ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়েও তেমন কোনো কাজ করে দেয়নি ছাত্রাবাস ভবনের কর্তৃপক্ষ শাহ স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
পরে ভিসি প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার সময় শিক্ষার্থীদের সামনেই ভিসির সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ করেন প্রধান শিক্ষক মুজিব। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এলে হলের সহকারি প্রভোস্ট সজিব ত্রিপুরার সাথেও দুর্ব্যবহার করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
এ ঘটনায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষকের অফিস ঘেরাও করে। তাকে ভিসির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় তারা। ইতোমধ্যে বিষয়টি চারদিকে জানাজানি হয়ে গেলে অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী ছাত্রদের আন্দেলনের সাথে যুক্ত হলে পরিস্থিতি উদ্বেজনক অবস্থায় গড়ায়।
খবর পেয়ে সাথে সাথে পুলিশ মোতায়েন করেন কোতয়ালী থানা ওসি আরিফুল আমিন। স্বল্প সময়ে মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন অতিরক্তি পুলিশ সুপার সদর সার্কেল জাহিদুল ইসলাম ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন। তারা ওসিকে সাথে নিয়ে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে বিচক্ষণতার সাথে তিন ঘন্টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
পরে শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জনরোষ থেকে বাঁচাতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন তাকে নিজ গাড়িতে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এসময় ভিসির আহ্বানে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফিরে যায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা প্রথমে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে অবরোধ না তোলার ঘোষণা দিলেও ভিসি নিজে শিক্ষার্থীদের জানান, প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বর্তমান ভিসি ড. সেলিনা আখতার যোগদানের পর যখন রাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সমস্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তখন প্রধান শিক্ষকের এই আচরণ আমাদের কাছে দুরভিসন্দিমুলক মনে হচ্ছে।
এদিকে ভিসি বলেছেন, একজন শিক্ষক হয়ে আরেকজন শিক্ষকের সাথে এমন আচরণ শোভনীয় নয়, তারপরও ক্ষমা চাওয়ায় আমরা তাকে ক্ষমা করে দিলাম। ভিসি যোগ করেন, আমি জানতে পেরেছি এই শিক্ষক আগেও শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন, যা কাক্সক্ষীত নয়।
এদিকে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ইউএনও গাড়িতে করে চলে যাওয়ায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যোগ দিতে আসা এলাকাবাসী জানায়, এই প্রধান শিক্ষক প্রায় সময়ই সবার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। তার আচরনে অতিষ্ঠ প্রাইমারি ও হাই স্কুলে পড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। এলাকাবাসী জানায়, এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যোগদানের পর থেকেই নানা অভিযোগ উত্থাপিত হলেও অদৃশ খুঁটির জোরে তিনি টিকে আছেন।