লংগদু সোনালী ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি ও কৃষক হয়রানী তদন্তের নির্দেশ আদালতের

165

॥ আলমগীর মানিক ॥

লংগদু উপজেলার অন্তত ৫ শতাধিক হতদরিদ্র প্রার্ন্তিক কৃষককে তথাকথিত কৃষি ঋণের ফাঁদে ফেলার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ সংঘবদ্ধ চক্রকে চিহ্নিতপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত জরুরী ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম-কে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ আবু হানিফ এই নির্দেশনা প্রদান করেন। এরআগে বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর ও রাঙামাটি জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখা হতে বিভিন্ন মানুষজনের নামে ভূয়া ঋণ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে উল্লেখ করে জনহয়রানী বন্ধে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া ঋণ প্রদান সংক্রান্ত বেআইনী কার্যকলাপ বিষয়ে অত্র আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনও আদালতে উপস্থাপন করেন পিপি।

বিষয়টি আমলে নিয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবু হানিফ এর আদালত তার লিখিত আদেশে উল্লেখ করেন, উক্ত প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ সমূহপাঠ ও দর্শন করে অত্র আদালতের আপাতদৃষ্টে এরূপ ধারণা হয় যে, লংগদু থানাধীন সোনালী ব্যাংক পিএলসি, লংগদু শাখা, রাঙামাটির এক বা একাধিক কর্মকর্তা/কর্মচারীসহ উক্ত ব্যাংকের যা প্রদান সংক্রান্ত বিভাগের কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যোগসাজশে একটি সংঘবন্ধ চক্র ব্যাংকে রক্ষিত জনগণের মূল্যবান অর্থ আত্মসাৎ করা বা অন্যবিধ বেআইনী কার্যকলাপে ব্যবহারের নিমিত্ত জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা ও ভুয়া ঋণ গ্রহণের কাগজপত্র তৈরী করে অর্থ উত্তোলন পূর্বক বেআইনীভাবে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে হয়রানী ও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এহেন কার্যকলাপ দি পেনাল কোড, ১৮৬০ সহ বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুসারে ফৌজদারী অপরাধের আওতায় পড়ে।

এমতাবস্থায়, এ সকল বেআইনী কার্যক্রম ও অপরাধ চিহ্নিতকরণ পূর্বক উক্ত বেআইনী কার্যক্রম বা অপরাধে দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিদের সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) চট্টগ্রাম-কে নির্দেশ প্রদান করা হলো। দি পেনাল কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(সি) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অত্র আদেশ প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালত দৈনিক পত্রিকা সমূহের প্রতিবেদনের কপিসহ আদেশের অনুলিপি তদন্তকারি সংস্থা পিবিআই-চট্টগ্রাম এবং উপ পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আগামী ৫ই মার্চ ২০২৪ ইং তারিখ আদালতে প্রতিবেদন প্রাপ্তির তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে।

এদিকে এরআগে সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে বিয়ষটি নিয়ে রাঙামাটির সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার, দুদক, জেলা লিগ্যাল এইডসহ সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রামস্থ প্রধান কার্যালয় বরাবরে লংগদুর ক্ষতিগ্রস্থ প্রার্ন্তিক কৃষকদের পক্ষে প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন লংগদুর বাসিন্দা তরুন আইনজীবি অ্যাডভোকেট আলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, মূলতঃ লংগদুর উপজেলা একটি পশ্চাতপদ পিছিয়ে পড়া এলাকা। সেখানকার হতদরিদ্র কৃষকদের ঋণের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। তাই আমি তাদের পাশে থাকার প্রত্যয়ে লড়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, একজন সচেতন নাগরিক তথাপি একজন আইনজীবি হিসেবে আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, উক্ত বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। তাই আমি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সুবিচার পাওয়ার লক্ষে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। আদালত আমার অভিযোগটি আমলে নিয়ে উক্ত আদেশ প্রদান করেছেন। পিপি বলেন, আমার মনে হচ্ছে সেখানে বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যাদের নামে ঋণ তোলা হয়েছে তারা সবাই নিন্মবিত্তের লোক। আমি চাই, ক্ষতিগ্রস্থরা ন্যায় বিচার পাক এবং প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় এনআইডিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে প্রায় ৫০৬ জন প্রার্ন্তিক কৃষকের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিগত ১০ থেকে ১২ বছর আগে সোনালী ব্যাংকের কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তা আলোড়ন চাকমা, আব্দুস ছাত্তার, বিল্লু কুমার তনচঙ্গ্যা, পিন্টু চাকমা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, প্রফুল্ল কুমার দাশ, নবীন কান্তি চাকমা ও পূর্ণগীতি চাকমাসহ সোনালী ব্যাংকের ফিল্ড অফিসার, তৎকালীন ব্যবস্থাপক, স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি এবং তাদের চামচা মিষ্টি কালাম, সন্তোষ, হেলাল, হাতেম, লেখক জামাল, মুজিবুর মাষ্টার নামক প্রতারকরা পরস্পর যোগসাজশে সেসময় কৃষি ঋণ প্রদানের নামে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যার সুধাসল বর্তমানে ৩০ কোটি টাকা।