স্টাফ রিপোর্ট- ২৭ এপ্রিল ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি): বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অগ্রগতি হচ্ছে। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করছে এবং কেমিক্যাল ও বয়লার সেক্টরে গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি ২০০৬ এবং ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। সচেতনতার অভাবে এসব আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতার বিকল্প নেই। আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আন্তর্জাতিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এবং ওশি-এর আয়োজনে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা : অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক সামাজিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো: মজিবুল হক এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি‘র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ওশির চেয়ারপার্সন রিজওয়ানা সাকী, নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী, ওখঙ এর আলবার্টো সার্ডা, ফায়ার ব্রিগেড-এর প্রাক্তন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবঃ আবু নাইম মো: শহিদুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রওশন মমতাজ, ড. ইশতিয়াক আহমেদ প্রমূখ । অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওশির সহ-সভাপতি ড. এস এম মোর্শেদ
প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শিশুশ্রম বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন থাকা স্বত্ত্বেও গৃহকর্মে শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে। তাই জনসচেতনতা জরুরী। কর্মক্ষেত্র পরিদর্শন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৮৩ লক্ষ ইনস্পেকশন ইউনিট পরিদর্শন করতে ২০ হাজার পরিদর্শক লাগবে যা সময় সাপেক্ষ। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সামাজিক সংলাপের উদাহরণ টেনে বলেন, এ ধরনের সামাজিক সংলাপ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। তিনি আরো বলেন, রানা প্লাজা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পরিদর্শন কর্মসূচীকে শক্তিশালী করা হয়েছে এবং পরিদর্শকের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকার যথাযথভাবে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমাক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজের সময় দুর্ঘটনার শিকার অধিকাংশ শ্রমিক কোন ক্ষতিপূরণ পায় না। এমন কি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণও দেয়া হয় না। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র না থাকায় দুর্ঘটনা পরবর্তী ক্ষতিপূরনসহ অন্যান্য অধিকার আদায় সম্ভব হয় না। গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ না থাকায় বাসাবাড়িতে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে । তিনি আরো বলেন, আমরা গর্ব করে বলি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত ৮৫ লাখ লোকের উপার্জিত অর্থ আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। কিন্তু প্রতি বছর বিদেশের মাটিতে প্রায় ৫০০০ অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। যাদের বেশির ভাগই পেশাগত দুর্ঘটনার শিকার। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় পেশাগত নিরাপত্তার বিষয়টি আরো বেশী গুরুত্ব প্রদানের লক্ষ্যে লেবার সেন্ডিং কান্ট্রি হিসেবে লেবার রিসিভিং কান্ট্রি গুলোর সাথে কুটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরো বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার লক্ষ্যে শ্রম আইনে সুষ্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বীমা সুবিধা না থাকায় তারা দুর্ঘটনায় পতিত হলেও ক্ষতিপুরণ হতে বঞ্চিত হয়। আমরা জানিনা ফ্লাইওভারের গাডার ভেঙ্গে নিহত ২ শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে কিনা? তাই অবশ্যই এই খাতে কর্মীদের বীমার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ওশি’র নির্বাহী পরিচালক এ. আর. চৌধুরী রিপন বলেন, বাংলাদেশে চলতি বৎসরের প্রথম ৩ মাসে পেশাগত দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১০১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ২২৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। আহতদের ৪৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত গত ৫ বছরে পেশাগত দুর্ঘটনায় পতিত হয় ৮৯৫৩ জন এর মধ্যে আহতের সংখ্যা ৪৩৭৩ জন এবং নিহতের সংখ্যা ৪৬১৬ জন।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান