স্টাফ রিপোর্টার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : পাহাড়ের উন্নয়ন, ক্ষোভ দ্রোহ এবং বিরোধ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন ‘সংলাপ এবং সংলাপ’ সংলাপই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে উন্মোচিত হয়েছে শান্তির নতুন ছাতা। এই ছাতার নীচে থেকে পাহাড়ের উন্নয়ন কে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন নতুন প্রজন্ম চায় উন্নয়ন ও অগ্রগতি, আর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শান্তি ও সমঝোতা। সমঝোতার জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সকল পক্ষের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমেই সব ধরণের বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। মন্ত্রী আরো বলেন, পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য প্রচলিত ধারণার বাইরে এসে আমাদের কে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন : সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কার্যকর করতে পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্বার জন্য একটি পৃথক আইন ও জাতীয় কমিশন গঠন করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, সংলাপের মধ্য দিয়েই সকল প্রকার বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি রাষ্ট্রীয় চুক্তি, এ চুক্তিতে কোন সরকার অতীতে হাত দিতে পারেনি,ভবিষ্যতে ও পারবেনা। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কার্যকর করতে সংলাপের মাধ্যমে সকল প্রকার বিরোধ মেটাতে উদযোগ নিতে সরকার ও জনসংহতি সমিতির প্রতি আহবান জানান।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, খালেদা জিয়া ও তার মদদপুষ্ট জঙ্গীবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীরা পার্বত্য চুক্তিকে বানচাল করতে চায়। তারা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্ঠি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে শেখ হাসিনার সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে পার্বত্য চুক্তির পক্ষে পাহাড়ী সম্প্রদায়সহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর ঊশৈসিং।
উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি সেনা রিজিয়নের বিগ্রেড কমান্ডার সানাউল হক পিএসসি, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরি চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ। এছাড়াও রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ও তাদের প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে ৪০ বছরপূর্তিতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সমন্বয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মুখ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌরসভা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পর উন্নয়ন বোর্ড প্রাঙ্গণে শান্তির পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে এবং উপজাতীয় নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অতিথিবৃন্দ।
এদিকে অনুষ্ঠানস্থলে আগেই থেকেই আমন্ত্রণ পত্রের মাধ্যমে এবং অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্ঠা গওহর রিজভী এবং পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এছাড়াও অনুষ্ঠানের রাঙামাটি জেলার সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার নিজেও উপস্থিত হননি।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রলালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী তার বক্তব্য প্রদানের সময় আজকের অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা ও উষাতন তালুকদার উপস্থিত না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তিনি নিজে বিষয়টি নিয়ে ব্যথিত হয়েছেন বলেও জানান।
সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান