॥ মোহাম্মদ সোলায়মান ॥ বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য বাংলা বর্ষ বরণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিসমূহের ঐতিহ্যবাহী বাংলা বর্ষ বিদায় ও বরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে চলছে নানা আয়োজন। রোববার থেকে শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৫দিনের বৈসাবী ও বৈশাখী মেলা। মেলা উদ্বোধন করেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, সংস্কৃতি জাতিে জাতিতে মেল বন্ধন রচনা করে। সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার মাধ্যমেই আমরা বিভেদ বৈষম্য এবং অনৈক্য দুর করে সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ নিতে পারি। এ সময় তিনি আগামী বছরটি যেন সবার জন্য মঙ্গল, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে এই কামনা করে বলেন। ফেলে আসা বছরের গ্লানী ও জরা ধুয়ে মুছে নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছর শুরু করার প্রত্যয়েই চৈত্র সংক্রন্তি তথা বর্ষ বিদায়ের এই চিরায়ত উৎসব। আসুন আমরা সকলে মিলে নতুন স্বপ্ন রচনা করি।
এদিকে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব ঘিরে বিজু সাংগ্রাই বিষু বিহু সাংক্রোন উদযাপন কমিটি শুরু করেছে তিন দিনব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা। ‘জুম্ম সংস্কৃতি বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হোন’ শ্লোগান নিয়ে রোববার সকালে এ উপলক্ষে পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণসমাবেশে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের ২৯৯নং রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
পাহাড় জুড়ে এভাবে নানা আঙ্গিকে শুরু হয়ে গেছে বৈসাবীর কমসূচি। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার বর্ণিল কর্মসূচি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিগুলোর নিজস্ব আঙ্গিকে বৈসাবী পালনে প্রস্তুতি ও কেনাকাটার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। অপর দিকে বাংলা বর্ষ বরণে জেলা প্রশাসনসহ এলাকায় এলাকায় চলছে বাংলা বর্ষ বরণের ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলাপ্রশাসন আয়োজিত পাঁচদিনের মেলায় আপাদ মস্তক বৈশাখি আমেজ এর সাথে থাকছে ঢাকা থেকে আসা বাউল ও লালন শিল্পীদের পরিবেশনায় চিরায়ত বাংলার গান ও ব্যন্ড সঙ্গীত। মেলা উদ্বোধনের পর পাপী মোনাসহ ঢাকা থেকে আসা শিল্পীরা দর্শকদের মাতিয়ে তোলে।
নববর্ষ ঘিরে আয়োজিত মেলাটি এবারই প্রথম জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় হস্তশিল্পের বিভিন্ন দোকান ছাড়াও বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প সামগ্রী এবং আধুনিক পণ্য সামগ্রীর ২৮টি স্টল রয়েছে। এ ছাড়া মেলায় প্রতিদিন সঙ্গীতায়োজনের পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের জন্য ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ ট্রেন এবং নাগর দোলার ব্যবস্থাও রয়েছে।
আগামী কাল মঙ্গলবার কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঐতিহ্যবাহী বিজু, সাংগ্রাই, বিহু ও বৈসুক বা বৈসাবি। বুধবার পালিত হবে মূল বিজু। আর বৃহস্পতিবার বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে সরকারি -বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। থাকছে আনন্দ শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও বলি খেলা; এ আয়োজন করছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়াও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষ বরণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। রাঙামাটি শহরে প্রতি বছর বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলা বর্ষ বরণ উৎসব পালন করে তবলছড়ি বর্ষ বরণ উদযপন পরিষদ। নব বর্ষের ২য় দিনে সকালে রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে র্যালী, যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা ও সন্ধ্যায় শাহ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও রিজার্ভ বাজার বাংলা নব বর্ষ বরণ উদযাপন পিরষদের উদ্যোগে গত বছর থেকে ব্যাপক কর্মসুচি পালক করা হয়ে আসছে। এ বছরও নব বর্ষের ৩য় দিনে রিজার্ভ বাজার বাংলা নব বর্ষ বরণ উদযাপন পিরষদের উদ্যোগে আনন্দ র্যালী, আলোচনা সভা, র্যাফল ড্র ও পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বারের ন্যায় শহরের গর্জণতলী ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১২ এপ্রিল ফুল ভাসানো, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বয়স্ক স্নান কর্মসুচি পালিতে হবে। এ ছাড়া জেলা বিভিন্ন স্থানে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই উপলক্ষে জলকেলি উৎসবে মেতে উঠবে।
ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বৈসাবীর উৎসবের কর্মসূচি। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও তিন দিনের বিজু, বিহু ও সাংগ্রাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ এপ্রিল রাঙামাটি জেলা পরিষদের উদ্যোগে বৈসাবী র্যালী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ৮ এপ্রিল জুম ঈসথেটিক কাউন্সিল এর উদ্যোগে বিজু বিহু ও সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে গুনিজন সংবর্ধনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। বৈসাবীর এসব আয়োজনে উৎসব আনন্দে একাকার হয়ে উঠে পাহাড়ি বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির মানুষ।
এদিকে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে বৈসাবী উৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সর্বস্তরের মানুষ। ফুল বিজুর পরের দির মূল বিজুতে অতিথি আপ্যায়নে পাহাড়ি ঘরে ঘরে তৈরী হবে ঐতিহ্যবাহি খাবার, পিঠা ও পাঁজন। এসব খাবার প্রস্তুতিতে বেচা কেনায় ব্যস্ত পাহাড়ি জনগোষ্ঠির মানুষ। এছাড়াও নতুন পোষাক বেচা কেনায় জমে উঠেছে জেলা সদর ও উপজেলা সদরের বিপনী বিতানগুলো।