হেডম্যান সম্মেলনে সন্তু লারমা : সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অকার্যকর করে রেখেছে

575

p.1

আলমগীর মানিক স্টাফ রিপোর্টার, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জন সংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেছেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তো করছেই না বরং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে অকার্যকর করে রেখেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে সরকার জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করে যাচ্ছে। অথচ চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্যবাসীর অধিকার ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। জনগণের প্রতিষ্ঠান তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সরকার দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণে পার্বত্য চট্টগ্রামের হেডম্যান, কার্বারীদের আরো সংগ্রামী হতে হবে উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, অনেকেই মনে করে যারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এটি বাস্তবায়নের কাজ শুধু তাদের, এই ধারনা ঠিক নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সকল পার্বত্যবাসীর। যারা চুক্তি করেছে শুধুই তাদের দায়িত্ব এটা ভাবা ঠিক নয়। শনিবার সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটে পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওয়ার্কের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্যবাসীর জন্য পায়ের তলায় মাটি নেই, মাথার উপরে আকাশ নেই এই অবস্থা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও ব্যক্তিগত স্বার্থকে না দেখে বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে হেডম্যান-কার্বারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের অধিকার আদায় সম্ভব হবে। না হলে বিলুপ্তির অপেক্ষায় দিন গুনতে হবে। তিনি আরো বলেন, কোন রাজাকে প্রধান অতিথি বানানো না হলে সে মর্যাদার দোহাই দিয়ে অনুষ্ঠানে আসে না। অথচ যখন একজন সিপাহী যখন দাঁড়ান বলে রাজাকে থামতে বলেন তখন তিনি তার মর্যাদার কথা ভাবেন না।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, হেডম্যানরা যে খাজনা আদায় করে তা দিয়ে হেডম্যানের কার্যাবলী পরিচালনা করা তো দুরের কথা কাগজ-কলম কিনার টাকা পর্যন্ত হয় না। গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকার অবহেলায় রেখেছে। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেডম্যানদের কাজে দক্ষ করার উদ্যোগ নিলেও সরকার বরাবরই উদাসীন। পার্বত্য চুক্তিতে সার্কেল চীফ, হেডম্যান, কার্বারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অধিকারের পরিবর্তে হেডম্যানদের ভাতা বৃদ্ধি, সার্কেল চীফদের পুণ্যাহ অনুষ্ঠান করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। শত শত দরখাস্ত স্মারকলিপি সরকারকে দেয়া হয়েছে এগুলো কতগুলোর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা এখন দেখার বিষয়।

রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ আগে যেভাবে পিছিয়ে ছিল সেভাবেই থেকে যাবে। পার্বত্যবাসীর স্বার্থে ভারত ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুণর্বাসন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি দরকার।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য দেন, এএলআরডির উপ-পরিচালক রওশন জাহান মনি, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা। সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা হতে আড়াই শতাধিক হেডম্যান ও কার্বারী অংশ নিচ্ছেন।

 
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান