।।সাইয়্যেদ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।।
রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দূর্গম ফারুয়া ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে তিনশো পরিবারের জীবন-জীবিকা এবং কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা পুনরায় জাগিয়ে তুলতে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর আবারো খাল খনন কর্মসূচি শুরু করেছে রাঙামাটি জেলা বিএনপি।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘গণিছড়া নালা খাল’ খননের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন।
এর আগে ফারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির নেতৃবৃন্দ স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান সরেজমিনে ফারুয়া পরিদর্শনে এসে স্থানীয় সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই খাল খননের উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের ফলে প্রায় সাড়ে তিনশো একর অনাবাদি পাহাড়ি জমিকে চাষের আওতায় এনে শুরু হয়েছিল এক অভাবনীয় কৃষি বিপ্লব।
তবে এরপর দীর্ঘ দুই যুগ রাজনৈতিক অবহেলার কারণে খালটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। এবার সেই ঐতিহাসিক খালটি পুনরায় খননের মাধ্যমে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহীদ জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত এই খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ফারুয়ার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে।
খাল খনন উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল, সহ-সভাপতি বাবুল আলী, নিজাম উদ্দিন ও আব্দুল মান্নান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী বাবর, যুগ্ম সম্পাদক এসএম শফিউল আজম, শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও দেবজ্যাতি চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্বাশত চাকমা রিংকু, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুন্নবি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, জেলা জাসাস সভাপতি কামাল হোসেন, কৃষকদলের সভাপতি অলোকপ্রিয় চৌধুরী রিংকু, সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন বাবলু, জাসাস সেক্রেটারি পঠন চাকমা, কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান হোসেন, বিলাইছড়ি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাফর আহম্মেদ, ফারুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তেজেন্দ্র লাল তঞ্চঙ্গ্যা, রাজস্থলী বিএনপির সাংগঠনিক মো: বাবুল, ফারুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামশু তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ সম্পাদক খুশিবাবু তঞ্চঙ্গ্যা, রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাইমুল ইসলাম রনি সহ, জেলা বিএনপির অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ফারুয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তেজেন্দ্র লাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন কৃষকবান্ধব নেতা। তার সময় নেওয়া উদ্যোগই আজও ফারুয়ার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।”
১৯৮০ সালে খাল খননের সময় উপস্থিত থাকা প্রবীণ বাসিন্দারা বলেন, “আমরা নিজের চোখে দেখেছি, কীভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এই খাল খনন হয়েছিল। সে সময় খাদ্য উৎপাদনে বিপ্লব এসেছিল।”
বর্তমানে পুনঃখনন কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আশার আলো জেগেছে। তারা বলছেন, “এই খাল আবারও খনন হলে কৃষিজ উৎপাদন বাড়বে, বেকারত্ব কমবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এর প্রভাব গোটা ইউনিয়নের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে দেবে।”