রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ সড়কগুলো দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল করছে যানবাহন। গত বছর ভয়াবহ ধসের পর বিধ্বস্ত হয়ে পড়া রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে সচল করতে ব্যয় হয়েছিল ১৪ কোটি টাকা। কিন্তু ক্ষতের তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ কম থাকায় ঝুঁকিমুক্ত হয়নি সড়কগুলো।
ওই দুর্যোগ সময়ে স্বল্প সময়ের প্রচেষ্টায় সড়ক বিভাগ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করলেও কোনো সড়কই তাতে নিরাপদ করা যায়নি। এসব সড়ক স্থায়ী মেরামতের জন্য গত অর্থবছরেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২২০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতায় বরাদ্দ না আসায় এ কাজে হাতই দিতে পারেনি সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষ; জানা গেছে এ কাজ শুরু হতে হতে এই বর্ষা মওসুম পার হয়ে যাবে।
এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে আবারও নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রায় সময় যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সড়ক যোগাযোগ। দেখা দিয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এ অবস্থার মধ্যেই চলাচল করছে যানবাহন। সরেজমিন পরিদর্শনসহ বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে এবার বর্ষার আগেই বিধ্বস্ত সড়ক ও সেতুগুলো স্থায়ী মেরামত করে ঝুঁকিমুক্ত করার কথা থাকলেও তা আর হল না। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
তবে দুর্যোগ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় থেকে গতবারের মতই সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাঙামাটির অভিজ্ঞ মহল এমন তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ১৭ সালে জুনে পাহাড় ধসের পর মন্ত্রী, সচিব ও প্রধান প্রকৌশলী সরেজমিন পরিদর্শনে এসে যে সহানুভ’তি ও আশ্বাস ব্যক্ত করে গিয়েছিলেন, সারাদেশের চাপে হয়তো তারা সেসব আশ্বাসের কথা ভুলেই গেছেন।
এদিকে, ভয়াবহ পাহাড় ধসের ১ বছর পর চলতি বর্ষা মৌসুমেও জনমনে রয়ে গেছে পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা। যে কোনো মুহূর্তে দুর্যোগে রাস্তাঘাটসহ নানা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে এখানকার মানুষ। এরই মধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের পাশ ধসে গিয়ে পড়েছে বসতবাড়িতে। ভাগ্যক্রমে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন, চার পরিবারের ২৫ জন মানুষ। ৯ জুন রাতে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই ঘটনা ঘটেছে ঘাগড়া কলেজের পাশেও। সেখানে একটি যাত্রি ছাউনী পুরোটাই উল্টে গিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, জুনেই রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের ১৫০টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ষার আগে কাজ করার সম্ভাবনা কম। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না পাওয়ায় কাজে হাত দেয়া যাচ্ছেনা।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, জুনের আগেই রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি-বান্দরবানসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের ১৫০টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ করতে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রায় ২২০ কোটি টাকার (ডিপিপি) প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যেটি বর্তমানে অভ্যন্তরীণ যাচাই কমিটির সভার অপেক্ষায় আছে।
সেখানে পাস হলে প্ল্যানিং কমিশনে যাবে। সেখান থেকে অনুমোদনের জন্য যাবে একনেকে। একনেকে অনুমোদন হলে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারব। এ বরাদ্ধটি পেলে আগামী ২০১৮-২০২১ সাল এ তিন বছরের মধ্যে রাঙামাটির সকল রুটে স্থায়ী নির্মান কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
এটা বর্ষার পার না হলে হবে না। আগামী শুষ্ক মৌসুমে হওয়ার আশা করছি। বর্তমানে গেল অর্থবছরের টাকায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি এবং কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামত কাজ করা হচ্ছে। ডিপিপি প্রস্তাবনায় জেলার বিভিন্ন সড়কের ১৫০পয়েন্টে ৫ হাজার ৪৭০ মিটার পাইলসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও কিছু সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে বলে জানান, এ নির্বাহী প্রকৌশলী।
সেখানে অনুমোদন হলে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলেই তখন কাজ শুরু করতে পারব। এটা এ বর্ষায় হবে না। আগামী শুষ্ক মৌসুমে হওয়ার আশা করছি। এমদাদ হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব রাঙামাটি পরিদর্শনে আসবেন এবং রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক পরিদর্শন করবেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ জুন সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে রাঙামাটিতে। এতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরই মধ্যে পাহাড় ধসের দুর্যোগের ১২ মাস অতিক্রম হয়েছে।
অথচ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আজও পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। ফলে আবার সড়ক ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সদরসহ জেলার ৭ উপজেলা এবং পাশের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের অন্তত ১০ লাখ মানুষ এসব সড়কের ওপর নির্ভরশীল।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য মতে, রাঙামাটি শহরের আভ্যন্তরীন সড়ক, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়ক, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়ক এবং বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক সহ ১৫০টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। এসব স্থানে স্থায়ী কাজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
এর আগে পাহাড় ধসের পর এসব সড়কের ১১৩ স্থানে ভাঙন ও গর্তের সাময়িক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় ধসে যাওয়া মূল সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি বেইলি সেতু। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু এতে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, গত বছর ১৩ জুনের পাহাড় ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় মূল সড়কটি ধসে ১০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। টানা ৩৩ দিন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাঙামাটি। এতে নিত্যপ্রয়োজণীয় পণ্য, খাদ্য ও জ¦ালানি সঙ্কটে পড়ে স্থানীয় মানুষ। শালবাগানে অস্থায়ী বেইলি সেতু নির্মাণে ৬৯ দিন পরে ভারি যান চলাচল শুরু হলে স্বস্তি ফিরে জেলাজুড়ে।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েক ধসে যাওয়া অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছে, সড়কের ভাঙনে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং দেয়া হয়েছে। বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এসব বস্তা আর খুঁটিকে সড়কের বিপরীত পাশ থেকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু বর্ষায় পানির প্রবাহে এসব বাঁধের ভাঙনরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নিলে ঝুকিতে রয়েছে সড়কগুলো। এরই মধ্যে কয়েক দফা ভারি বৃষ্টিপাতে অনেক স্থানে এসব গাছের খুঁটি দিয়ে তৈরি পাইলিং ধসে গেছে। দেবে গেছে মাটি। বাকিগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। বৃষ্টিপাতের ফলে যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সড়কের দু’পাশের পুরনো ড্রেনগুলো পরিস্কার করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা সচল করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।