আল আমিন এতিম খানার পোষদের মাঝে ঈদ পোষাক বিতরণ ও ইফতার

517

স্টাফ রিপোর্টার

‘কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ’ (কেএসআর) এর অর্থ সহায়তায় রাঙামাটি ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত আল-আমিন ইয়াতিম খানার পোষ্য-ছাত্রদের মাঝে ঈদ পোষাক বিতরণ করা হয়েছে। একই সময় সেখানে অনুষ্ঠিত হয় ইফতার মাহফিল। রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এতিমদের মাঝে ঈদ পোষাক বিতরণ করেন।

শনিবার (১৮ মে) বিকেলে এতিমখানার নিজস্ব মিলনায়তনে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক সেন্টার রাঙামাটির চেয়ারম্যান ও রাঙামাটি জ্যেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট মোখতার আহমেদ, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক রাঙামাটি সম্পাদক আনোয়ার আল হক। আল আমিন ফাজিল ডিগ্রি মডেল মাদ্রসার অধ্যক্ষ মাওঃ নুরুল আলম ছিদ্দিকী। এতিমখানার সুপার মাওঃ অলিউল্লাহর সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে মুনাজাত পরিচালনা করেন ফিসারী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওঃ আব্দুল জলিল সরকার।

ইফতার মাহফিলের আগে এতিমখানার প্রায় ৮০জন ছাত্রের মাঝে ঈদুল ফিতর ঘিরে উন্নত মানের পোষাক এ্যাপেক্সের জুতা ও টুপি বিতরণ করা হয়। এসময় এতিম খানার শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে উপজেলা চেয়ারম্যান রোমান বলেন, পিছিয়ে পড়া পার্বত্য রাঙামাটির প্রাণকেন্দ্রে এ ধরণের একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান যেমন দরিদ্র অসহায় পরিবারগুলোর জন্য ভরসার স্থল, তেমনি রাঙামাটির সামাজিক প্রেক্ষাপটেও এই প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কারণ রাঙামাটি জেলার বাস্তবতা হলো এখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ মাঝে মাঝে বিনা কারণে হামলা চালিয়ে দরিদ্র গ্রামবাসিকে হত্যা করে চলে যায়। এতে এই জেলায় অনেক পরিবার যেমন নিঃস্ব হয়ে পড়ে তেমনি এই প্রক্রিয়ায় এতিম সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। তিনি পাহাড়ের মানুষের কল্যাণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনার জন্য কেআরসি এবং ইসরামিক সেন্টারকে ধন্যবাদ জানান।

এতিমখানার সুপার মাওঃ ওয়ালিউল্লাহ এ সময় অতিথিদের জানান, কে এস আর এর কান্ট্রি ডিরেক্টর তথা বাংলাদেশ ক্লাস্টারের মহা পরিচালক ড. গাজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সরাসরি তত্ত্বাবধানে আমরা এতিম শিশুদের সর্বোচ্চ মমতা এবং মধ্যবিত্ত সুযোগ সুবিধায় লালন পালন করে থাকি। এতিম খানার সুপার থেকে শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানের সকল আবাসিক শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারী বেতন ‘কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ’ (কে এস আর)এর অর্থায়নে পরিচালিত হয়। তিনি জানান, বছরে দুইবার শিশুদের নতুন কাপড় চোপড় ঈদ সালামী প্রদান ছাড়াও তাদের লেখা-পড়ার যাবতীয় ব্যয় প্রতিষ্ঠান থেকে বহন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে তাদের থাকা খাওয়া ছাড়াও শ্রেণির পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এতিমরা তাদের পছন্দমতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে থাকে।

প্রসঙ্গত, বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কুয়েত ভিত্তিক সাহায্য সংস্থা ‘কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ’ (কে এস আর) রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় অবস্থিত আল আমি এতিমখানার ৮০জন শিক্ষার্থীর লালন-পালন ও ভরণ-পোষণ ছাড়াও শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করে যাচ্ছে। ৮০ এর দশকে তৎকালীন অনগ্রসর রাঙামাটির দুঃস্থ, এতিম ও অনাথ শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলিকত করার মানসে ইসলামিক সেন্টার রাঙামাটি আল-আমি এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু অভাব অনটনের সমাজ ব্যবস্থার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ তিন দশকের স্বশ¯্র সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই প্রতিষ্ঠানে পিতা-মাতা হারা এতিম শিশুদের ভিড় বাড়তে থাকে। এসব অনাথ শিশুদের ক্রমাগত চাপের মুখে ইসলামিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়লে ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দাতা সংস্থার স্মরণাপন্ন হয়। শিশুদের জীবন বৃত্তান্ত পাহাড়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো দেখে এক পর্যায়ে ৪০জন শিশুর ভরণ পোষণের মাধ্যমে আল আমিন এতিমখানার পরিচালনার দায়িত্ব কাধে তুলে নেয় কেজিআরসি এবং পরবর্তীতে কেএসআর এর দায়িত্ব পালন করছে।