কাউখালীতে প্রকাশ্যে ৩শ’ গাছসহ উচুঁ পাহাড় কেটে সাবাড় করছে প্রভাবশালী চক্র

559

॥ আলমগীর মানিক ॥
কাউখালী উপজেলা সদরের ইউএনও অফিস থেকে মাত্র কয়েক শ’ গজ দুরে প্রকাশ্য সকলের চোখের সামনেই স্কুল নির্মাণের নামে অবৈধ ভাবে সেগুন, গামারি, মেহগণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩শতাধিক গাছসহ উঁচু পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিয়েছে এলাকার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। শুধু তাই নয় চক্রটি পাহাড় কেটে মাটিও বিক্রি করছে বলে এলাকাবসী অভিযোগ করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙ্গে ফেলা পুরাতন বিশাল বিদ্যালয়টি ছিল টিন সেড সেমি পাকা ভবন। বিদ্যালয়ের সাথে লাগোয়া ছিল আধুনিক ২টি পাকা ওয়াশ রুম সেগুলোও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। পাহাড় কাটা মাটি নেওয়ার জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বিদ্যালয়ের সিমানা প্রাচীর। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, উপজেলা সদরের পোয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয়। অর্ধ শতাব্দী পরনো বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ কাজটি বাস্তবায়ন করেছে উপজেলা এলজিইডি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ এই কাজ বাস্তবায়ন কেন্দ্র করে হরিলুটে নেমেছে বিদ্যালয়ের ঠিকাদারসহ প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি। এই সিন্ডিকেট চক্রের কাছে স্থানীয় প্রশাসনও অনেকটা অসহায় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের প্রদত্ত নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ্য দিবালোকে এই ধরনের কর্মকান্ড চলে আসলেও ক্ষমতাসীন দলের হয়রানীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। প্রভাবশালী এক নেতার ছেলের নেতৃত্বে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ জনপ্রতিনিধিরা মিলে সিন্ডিকেট করে সরকারি সম্পদ হরিলুটে মেতেছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, কয়েক শতাধিক গাছ বিক্রি করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রভাবশালী চক্রটি। তারা বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের নামে উচুঁ পাহাড় কেটে মাটিগুলো জনৈক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দিচ্ছে।

খোঁজনিয়ে জানাগেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার ভাতিজী জামাই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রী বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষিকা। এছাড়াও কমলপতি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমার স্ত্রী মিনু মারমাও এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। ঐ চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে কোনো নির্বাচন ছাড়াই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কনিষ্ট বড়–য়া। এদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণেই চলছে লুটপাটের মহোৎসব।

পাহাড় কেটে স্কুলের দেওয়াল ভেঙ্গে যাওয়া, পুরাতন ভবনের মালামাল বিক্রি ও স্কুলের পুরাতন গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া এসব ব্যাপারে সুস্পষ্ট উত্তর নাদিয়ে পোয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উসিচিং মারমা প্রতিবেদককে বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ যার কারনে আমি কিছুই জানতে পারিনি।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি কনিষ্ট বড়–য়া জানান, গাছ কে বা কাহারা কেটেছে তা আমি জানিনা। আর স্কুলের স্বার্থে সামান্য মাটি কাটা হচ্ছে তাও ইউএনও কাউখালীর মাধ্যমে ডিসি থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন তার কমিটির মেয়াদকাল মাত্র এক বছর। এর আগের কমিটি লোকেরা বিদ্যালয়ের গাছগুলো বিক্রি করেছে।

কাউখালী উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, কাজটি পেয়েছে রতন এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজ করছেন সম্ভবত জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরীর ছেলে অভিমং চৌধুরী ও আজিজ। সেখানে কিছু মাটি সমান করার কথা কিন্তু এভাবে মাটি কাটার কথা ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেন্ডারে পাহাড় কাটার কথা উল্লেখ নাই এবং পাহাড় কাটা হচ্ছে এমনটি এ পর্যন্ত আমিও ভালো করে জানিনা।

উপজেলা সদরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শতরুপা তালুকদার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে সাথে নিয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটার বিষয়টির সত্যতা পান। এসময় মুঠোফোনে তিনি কোনো একজনের সাথে কথা বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আপাতত কাজটি বন্ধ রাখতে বলেছি। তবে মিডিয়ার সামনে আমি কথা বলতে পারবো না। মাটি কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টির খোঁজ নিয়ে সাথে সাথেই কাজটি বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।