কাউখালীতে চাকুরিচ্যুত আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে স্বজনদের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ

677

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাঙামাটির কাউখালীতে চাকুরিচ্যুত সাবেক এক আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে সুকৌশলে স্বজনদের সম্পদ আত্মসাৎ, জোরপূর্বক দখল, সরকারী খাস জায়গা দখল, প্রাণনাশের হুমকি, এতিমের সম্পত্তি আত্মসাৎ এমনকি প্রতারনা করে সম্পদ আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগ করেছে তারই স্বজনরা। স্বজনদের অভিযোগ নেই চাকরি,নেই কোন প্রবাসী সন্তান এমনকি আয়ের উৎসও নেই তবুও রাতারাতি হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গিয়েছে কাউখালী উপজেলা সদরের মৃত ঝারু মিয়া খন্দকারের ছেলে চাকরীচ্যুত আনসার সদস্য ফরিদ খন্দকার(৬০)।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাউখালী হাসপাতালের সামনে শুধু দুই শতক জমির মালিক হয়েও সরকারী ৪০ শতকের মতো খাস জমি দখল করে ভাড়াটিয়া ঘর নির্মান, পাশাপাশি তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে প্রায় ৬০লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাকা দালান নির্মান করেছেন তিনি। এছাড়াও হাতিমারা এলাকায় তার নামে জায়গা ও বাগান, কাউখালী হাসপাতালের ভিতরে জায়গা, জোরপূর্বক দখল করে কাউখালী পুরাতন টিএনটির উপর জায়গা, শামুকছড়িতে বেশ কয়েক একর পাহাড়(বাগান সম্বলিত) জায়গা এবং কাউখালী কলেজের পিছনে ৯ একর সেগুন বাগান, ব্যাংক ব্যালেন্স ও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বেশ স্বর্নালংকার ও রয়েছে বলে অভিযোগ পত্রের মাধ্যমে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে তারই স্বজনরা। একাধিক অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরিদ খন্দকার পূর্বে ২ ব্যাটালিয়ান আনসারের ঢাকায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে চাকরি করতেন। ২০০৭ সালে অনিয়ম এবং বড় ধরনের দুর্নীতির কারনে তার চাকরি চলে যায় বলে এলাকায় প্রচার হয় এবং সেই থেকে কাউখালী বাস করছে ফরিদ।

পরিবারের সদস্য মুজিবল হক পাটোয়ারী, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী এবং নুরউদ্দিন পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, ফরিদ খন্দকারের সাথে একই পরিবারে সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। পরিবারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ফরিদ খন্দকারকে নিয়োজিত করা হয়। সরল মনে পরিবারের সকল সদস্যদের অর্জিত সকল টাকা-পয়সা,ধন সম্পদ প্রয়োজনীয় সময়ে সকল সম্পদ সমভাবে বন্টনে বাধ্য থাকিবে বলে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়ে তার কাছে গচ্ছিত রাখা হয়। কিন্তু ফরিদ পরিবারের সকল সদস্যদের সরল বিশ্বাসের উপর প্রতারনা করে সুকৌশলে সকল সম্পদ এককভাবে ভোগ করার প্রচেষ্টায় আছে। এবং এই সমস্ত বিষয়ে হিসাব চাইতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাননাশের হুমকি প্রদান করে।

জায়গা ক্রয় করেও প্রাননাশের হুমকির স্বীকার আলমগীর ড্রাইভার বলেন,আমি ফরিদের কাছ থেকে ৩৫০ খতিয়ান ২৪৭০ দাগ নং থেকে দশ বছর পূর্বে তিন শতক জমি ক্রয় করি এবং তাকে সাক্ষী রেখে তার দেখানো মাফ মোতাবেক ঘর নিমার্ন করি।কিন্তু বর্তমানে তিনি তার বিল্ডিং নির্মান করতে গিয়ে আমার ঘরের চালের টিন কেটে ফেলে এবং আমি আমার ঘর মেরামত করতে গেলে সেখানে তিনি বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। এমনকি প্রতি রাতে তাদের জানালা আমাদের ঘরের চালের উপর তার ছেলে ও নাতিকে দিয়ে প্রসাব করায়।যার দুর্গন্ধে বাসায় ও থাকতে পারিনা।প্রতিবাদ করতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও প্রাননাশের হুমকি -দামকি দেয়।

সম্পত্তি আত্মসাৎ এর অভিযোগ করে অসহায় এতিম মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস অভিযোগ করে বলেন, আমার পিতা জামাল উদ্দিন মারা যাওয়ার পর পিতার রেখে পিতার রেখে যাওয়া কাউখালী সদরে একটি দোকান ঘর, পিতার অংশের জায়গা সম্পত্তি ও আমার দাদার সম্পত্তি যা আমার পিতার প্রাপ্ত অংশ ফরিদ খন্দকার ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম সম্পূর্ন আত্মসাৎ করে।এমনকি আমরা গোপনে জেনেছি যে আমার পিতার দোকান ঘরটি ৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।আমার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় চাকরী জীবনের অর্জিত টাকা-পয়সাও তাদের নিকট আমানত ছিল সেটাও আতœসাৎ করে।

প্রতারনার অভিযোগ করে আব্দুল খালেক বলেন,মুজিবলের কাছ থেকে ৩০৫দাগ নং ২৪৬৯,২৪৭০ এর অন্দর হইতে পাচঁ শতক জমি বায়না সূত্রে খরিদ করি। সেই জমির পরিবর্তে আমার দখলীয় খাস জমি ০.৪০(চল্লিশ শতক) একর মুজিবলের স্ত্রীর নামে বায়না নামা মূল্যে লিখে দেই।কিন্তু মুজিবল হক ও ফরিদ খন্দকার আমার সাথে প্রতারনা করে ০.৫(পাচঁ শতক) একর বিবাদীর নামে দখল করে নেই। আমার হাতে ০.৪০(চল্লিশ শতক) একর খাস জমি তারা ভোগ দখল করিয়া নেই। এ বিষয়ে ফরিদকে জিজ্ঞাসা করলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দ ও মেরে ফেলার হুমকি দেই।

ফরিদ ও তার স্ত্রীর মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে জায়গা ক্রয় করে বিপাকে পড়ে চার ভাই জাহাঙ্গীর আলম, হারুন, রবিউল ইসলাম, আব্দুল হান্নান অভিযোগ করে বলেন, আমরা চার ভাই মিলে ফরিদের কাছ থেকে ০.১০(দশ শতক) জায়গা ক্রয় করেছি। কিন্তু সম্পূর্ন ০.১০(দশ শতক) একর জায়গা এখনো পর্যন্ত বুঝিয়ে দেই নাই। জায়গা পরিমাপের কথা বললে আমাদের কোন কথায় গুরুত্ব দেয়না। তাদের বিরুদ্ধে সমাজে গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের নিকট বললে বৈঠকে বসতে বলা হয়। তাদেরকে বৈঠকে বসতে বললে কোন কথায় গুরুত্ব দেইনা। যদি জায়গা পরিমাপ না করা হয় বাড়িঘর মেরামত করা সম্ভব না।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদ খন্দকার ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান,এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি পরিবারের সদস্য মুজিবল হক পাটোয়ারী, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী এবং নুরউদ্দিন পাটোয়ারী অভিযোগ গুলো বানোয়াট। তারা যদি অর্জিত সম্পদ জমা রাখতো তাহলে প্রত্যেক মাসে মাসে হিসাব চাইতো। মূলত: পারিবারিক দ্বন্দের কারনে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করছে তারা।

তাছাড়া কাউখালী হাসপাতালের সামনে ৬০লক্ষ টাকা ব্যায়ে পাকা দালান নির্মান জায়গা বিক্রি করে নির্মান করেছি। এবং যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা সবাই আমাদের পরিবারের সদস্য। আনসারের চাকরি দুর্নীতির কারনে গিয়েছে সেটাও মিথ্যা মূলত ৯ মাস অনুপস্থিত থাকার কারনে চাকরি গিয়েছে কোন প্রকার দুর্নীতির কারনে যায়নি।