॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
রাঙামাটি শহরের প্রতিটি ঘরেই এখন অসুস্থতা। পরিচিত কাউকে কুশল-মঙ্গল জিজ্ঞেস করতেই উত্তর আসে ‘ভাল নেই, ভাই/ মা/ বাবা/ ভাই/ বোন/ স্ত্রী/ সন্তান অসুস্থ’। ‘ভাইরাস জ্বর’ নামে পরিচিত এই অসুস্থতা প্রায় প্রতি বছর হানা দিলেও এই মহামারীর সময়ে চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। এই জ্বরে আক্রান্ত অনেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও অনেকে দীর্ঘদিন ধরেও ভুগছেন। তাই “নাপা খেলেই সুস্থ হয়ে যাবো” ধরণের গতানুগতিক আত্মবিশ্বাসও মার খাচ্ছে এই পরিস্থিতিতে। জেলার স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মতে নমুনা পরীক্ষার আগে কোনটা সাধারণ ভাইরাস জ্বর আর কোনটা প্রাণঘাতী করোনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তবে এই নমুনা পরীক্ষাতেই অনীহা রাঙামাটিবাসীর।
রাঙামাটি পিসিআর ল্যাবে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন মাসুদ রানা শাকিল। পিসিআর ল্যাবের প্রতিদিনকার রিপোর্ট তৈরী করা এবং সেই রিপোর্ট ঢাকা মূল অফিসে প্রেরণ করা তাঁর দায়িত্ব। তিনি জানান, পিসিআর ল্যাবে ১ টি নমুনা পরীক্ষা করতে যে শ্রম এবং সময় লাগে ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করতেও একই শ্রম আর সময় প্রয়োজন কিন্তু তারপরও দেখা যায় দৈনিক গড়ে ২৫-৩০টির বেশী নমুনা থাকে না।
বর্তমানে আমরা ৯ জন পিসিআর ল্যাবে কাজ করছি। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ৬দিনই আমরা ল্যাবে কাজ করি। আমরা ভেবেছিলাম পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ নিজে উদ্যোগে নমুনা দেবে কিন্তু সেটি হচ্ছে না।
শাকিল আরো বলেন, সকাল ৯ টায় আমরা পিপিই পড়ে ল্যাবে প্রবেশ করি, এরপর বিকেল ৫টায় কাজ শেষ করে পিপিই খুলে বাসায় এসে গোসল করার আগ পর্যন্ত আমাদের নাওয়া খাওয়া বন্ধ থাকে। এই শ্রমের জন্য আমাদের জন্য কোন অতিরিক্ত ভাতা বা প্রনোদনার ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র শহরটাকে সুস্থ রাখার জন্যেই আমরা এই কষ্টটা করছি। তাই শহরের মানুষকে অনুরোধ করবো যে আপনারা উপসর্গ দেখা দিলেই নমুনা দিন তবেই আমাদের কষ্ট স্বার্থক হবে।
মানুষের নমুনা দেওয়ার প্রতি অনীহার বিষয়টি স্বীকার করে রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার মোস্তফা কামাল বলেন, শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এখন ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ। সাধারণ ভাইরাস জ্বরের উপসর্গ ও করোনার উপসর্গ কিন্তু একই তাই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে হলে নমুনা পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু মানুষ এখন নমুনা দিতে চায় না। আমাদের উপজেলাগুলোতেও নমুনা খুব কম সংগ্রহ হচ্ছে।
জেলায় করোনার প্রকোপ শুরুর দিকে সময়টা এমন ছিল যখন নমুনা দেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় জমতো কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা সবার নমুনা সংগ্রহ করতে পারতাম না। কিন্তু এখন আমাদের নিজস্ব পিসিআর ল্যাব আছে যেটিতে দৈনিক ১০০-১২০টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব এবং নমুনা দেওয়ার ৬-৭ ঘন্টার মধ্যেই আমরা রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু তারপরও মানুষ নমুনা দিচ্ছে না।
নমুনা দেওয়ার প্রতি এমন অনাগ্রহের কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা জানান, ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি মানুষের নমুনা দেওয়ার প্রতি এই অনীহার মূল কারণ ৩টি। প্রথমত. মানুষ এখন করোনা ভাইরাসকে খুব হালকা ভাবে নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত. সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার একটি ভীতি। তৃতীয়ত. ১৪ দিন লকডাউনে থেকে আটকে পড়ার একটি ভীতি।
করোনাকে এখনি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি আরো জানান, রাঙামাটিতে ইতিমধ্যেই ১২ জন মানুষ করোনায় মারা গেছেন। পরিসংখ্যান যাচাই করলে যদিও মৃত্যুর হার অনেক কম মনে হবে কিন্তু যে পরিবার তার সদস্য হারিয়েছে তাদের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি। তাই আমাদের আগের চেয়ে বেশী সচেতন হতে হবে। তাই অসুস্থ হলেই নমুনা পরীক্ষা করানোটা আবশ্যক বলে আমি মনে করি।