॥ মাহাদি বিন সুলতান ॥
আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচরের দূর্গম নানাক্রম-বুড়িঘাট সড়কটির নির্মাণ প্রকল্প ঝুলে আছে বছরের পর বছর। বেশ কয়েক বছর আগে উপজেলা সদর থেকে বুড়িঘাট পর্যন্ত যাওয়ার এই একমাত্র সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও মাঝপথে তা থেমে যাওয়ায় নিদারুন কষ্টে যাতায়াত করছে বুড়িঘাট এরাকায় বসবাসরত অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের মানুষ। সাধারণ যাতায়াত ছাড়া কৃষিপণ্য বাজারজাতে দুর্ঘোগ পোহাচ্ছে এলাকার চাষি পরিবারগুলো। বিশেষ করে আনারসের মওসুমে এই দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। এলাকাবাসীর মতে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের এই একমাত্র সড়কটি নির্মাণ করা হলে বদলে যাবে এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা মান।
নানিয়ারচর ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কারণে উপজেলার সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বর্তমানে অনেক সাবলীল, কিন্তু উপজেলার সাথে নানাক্রম-বুড়িঘাট এলাকার নেই পাকা সড়ক ব্যবস্থা। সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকায় সড়ক যোগাযোগ না থাকায় দূর-দুরান্ত থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে থাকে। কৃষক কিংবা সাধারণ জনগণ পায়ে হেঁটেই ছুটে চলেন গন্তব্যে। কিছু এলাকার মানুষ চলাচল করে নৌকা কিংবা মটর সাইকেলে।
এলাকাবাসী জানায়, এই এলাকার সাধারণ চাষীরা কলা, আদা, হলুদ, আনারসসহ উৎপাদিত পাহাড়ি পণ্য পায়ে হেঁটেই নিয়ে যান হাট-বাজারে। নানাক্রম-বুড়িঘাট সড়কটি নির্মাণ হলে এই এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক পরিবার ও প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের জীবন যাত্রার মান বদলে যাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, নানাক্রম-বুড়িঘাট এলাকার একটি উন্নত সড়ক না থাকায় আমরা ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের প্রায় ৫ হাজার পরিবার ভোগান্তির স্বীকার। নানাক্রম-বুড়িঘাট সড়কটির ফলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কবির হোসেন জানান, এই সড়কটির উন্নয়ন হলে নানিয়ারচরের সাথে বুড়িঘাটের যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা হবে। এতে করে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই নানিয়ারচর যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবহন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
এব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানালেন, ছোট ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করতে অনেক দূর দূরান্ত পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বিষয়টা অভিভাবকদের জন্য খুব চিন্তার। সড়কটি নির্মাণ হলে এলাকাবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে।
স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এডভোকেট মামুন ভূঁইয়া জানান, কুকুরমারা হতে বুড়িঘাট সড়কটি ইতোমধ্যেই কাজের শুরু হয়ে নানাক্রম পর্যন্ত এসে কোন এক অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচর। উপজেলার বুড়িঘাট অঞ্চলেই আনারসের ফলন অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু উন্নত যাতায়াত সুবিধা না থাকায় কৃষকরা মাথায় করে পণ্য বহন করে লোড পয়েন্টে মালামাল পরিবহণ করেন। এতে করে সাধারণ কৃষকরা আর্থিক দিক দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। কুলুরমারা হতে বুড়িঘাট পর্যন্ত একটি ভাল মানের সড়ক নির্মাণ হলে সাধারণ কৃষকরা উপকৃত হবেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নানিয়ারচরের উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার (এলজিইডি) রনি সাহা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প (সিএইচটি ৩) ডিপিপি অন্তর্ভুক্ত আছে। একনেক এ পাশ হলেই দ্রুত এই সড়কের কাজ শুরু হবে।