রাঙামাটি জেলা পরিষদে ১১জনই নতুন মুখ ; চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌ

1682

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদসহ পার্বত্য তিনটি জেলা পরিষদ পুণর্গঠন করেছে সরকার। পরিষদ গঠনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের চিটি বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদে পৌঁছে। যদিও তা এখনও জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তবে চিঠি পাওয়ার বিষটি নিশ্চিত করেছে জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল সূত্র।

পরিষদের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে ১৫ সদস্যের পরিষদের ১১ জনই নতুন মুখ। ্আগের পরিষদের সদস্য অং সুই প্রু চৌধুরীকে করা হয়েছে চেয়ারম্যান। আর ওই পরিষদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর, বরকলের নেতা সবির কুমার চাকমা এবং রেমলিয়ানা পাংখোয়া ছাড়া বাকি সবাই নতুন মুখ। এর মধ্যে অবশ্য পুরনো আরো একজন সদস্য কে এবারের পরিষদে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা অং শু চাইন চৌধুরী। তিনি গত পরিষদে না থাকলেও এর আগে একাধিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়া অংশি প্রু চৌধুরীও প্রায় সকল পরিষদেই সদস্য ছিলেন। তিনি রাঙামাটি জেলা পরিষদের বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞও বটে। ১৯৮৯ সালে নির্বাচিত পরিষদ থেকে শুরু করে অনেকগুলো পরিষদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি জেলা পরিষদের পক্ষে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। তার চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টিকে তাই ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

নতুন পরিষ বিষয়ে অনানষ্ঠানিক তথ্যে পাওয়া তালিকা হলো ঃ চেয়ারম্যান অংশি প্রু চৌধুরী। সদস্যঃ সবির কুমার চাকমা, প্রবর্তক চাকমা, প্রিয় নন্দ চাকমা, ইলিপন চাকমা, হাজি মুছা মাতব্বর, আসমা বেগম (প্রয়াত সদস্য জানে আলমের স্ত্রী) রেমলিয়ানা পাংখোয়া, দ্বিপ্তীময় তালুকদার, নিউচিং মারমা, ঝর্ণা চাকমা, অংশু চাইন চৌধুরী, বিপুল ত্রিপুরা, আব্দুর রহীম ও বাদল চন্দ্র দে।

নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচিত পরিষদের মাধ্যমে পরিচালনার আইন থাকলেও পার্বত্য চুক্তির পর থেকেই জেলা পরিষদগুলোতে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকারগুলো। যার ধারাবাহিকতায় এবারও পুর্নঃগঠন করা হলো।

এদিকে পার্বত্য বান্দরবানের বর্তমান চেয়ারম্যানকে বহাল রাখা হলেও নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি হলেন মংশৈ প্রু চৌধুরী অপু বান্দরবানের বর্তমান চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কে চেয়ারম্যান পদে আবারও রাকা হয়েছে।

তিন জেলা পরিষদের ৪৫টি পদের মধ্যে অন্যান্য পদগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এ রিপোর্ট পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গতঃ পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রথম ও শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন। এরপর আর নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির আইনে বলা আছে, পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে প্রণীত পৃথক ভোটার তালিকায় ৩ পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ১ জন চেয়ারম্যান এবং ৩৩ জন সদস্য নির্বাচিত হবে। প্রত্যেক পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জনগণের ভোটে উপজাতিদের মধ্য থেকে ১ জন চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্য, অ-উপজাতি ১০ জন এবং সংরক্ষিত তিনটি মহিলা আসনে ২ জন উপজাতি ও ১ জন অ-উপজাতি সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ায় পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোত জনগণের অংশগ্রহন নিশ্চিত হয়নি। ১৯৯৬ সালের ৫ আগস্ট নির্বাচিত তিনটি পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রত্যেক পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য মনোনয়ন দিয়ে অর্ন্ত্বর্তীকালীন পরিষদ গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্তে ১৯৯৮ সালে আইন সংশোধন করে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ থেকে ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ নামে সংশোধিত হয়। এরপর আর নির্বাচন দেয়নি সরকার। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ১ জন চেয়ারম্যানসহ সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ১৫-তে উন্নীত করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করে সরকার।

অতীতের রেওয়াজ ঘাটলে দেখা যায় সাধারণত সরকার পরিবর্তনের পর পরিষদগুলোতেও পরিবর্তন আনা হয়। সে হিসেবে গত এক বছর এ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা এবং ও তদবির ছিল। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে সবাই যে তথ্যটি নিয়ে চমৎকৃত তা হলো তিন জেলা পরিষদের মারমা আধিপত্য প্রকাশ পেয়েছে। এটা হতে পারে কাকতালীয় বা রাজনীতির কোনো নতুন ইঙ্গিত।