নানিয়ারচরে আনারসের ফলনে ধস চাষিরা বিপাকে মিলছে না দাম

478

॥ মাহাদি বিন সুলতান ॥
ফাল্গুন ছাড়িয়ে চৈত্র এলেও আনারসের রাজধানী খ্যাত নানিয়ারচর উপজেলায় দেখা মেলেনি বৃষ্টির। ফলে আনারসের আগাম ফলন আনতে হরমোন প্রয়োগ চাষি ও ব্যাবসায়ীদের ফেলেছে চরম ভোগান্তিতে। লাভের পরিবর্তে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরাা।

মঙ্গলবার (৩০শে মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার বগাছড়ি, ইসলামপুর, ঘিলাছড়ি ও ১৭ মাইল এলাকায় কৃষকের বাগান ছেয়ে আছে মধু ফল আনারসে। তবে অনাবৃষ্টির ফলে ভিটামিন ও হরমোন প্রয়োগের পরও আকারে ছোট থাকতেই বাগানে পেঁকে যাচ্ছে এসব ফল।

এবিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, সারা বছর আনারস কাঁটার সাথে লড়াই করে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখে, সার ও কিটনাশক দিয়ে ১৮মাস শেষে আসে ফসল। কিন্তু আনারসের মৌসুমে আমরা তেমন লাভ করতে পারছি না। ফলে উঠে আসেনা যোগান দেওয়া অর্থ। আর তাই ক্ষতির বদলে লাভবান হতেই প্রয়োগ করা হয় ফল বর্ধক ও অগ্রিম পাঁকার বিশেষ হরমোন। এতে আগাম ফল পেয়ে বেশ লাভের মুখ দেখছে চাষিরা। কিন্তু ফাল্গুন শেষে চৈত্র মাস চলে এলেও অনাবৃষ্টির ফলে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কিছু চাষি ও ব্যাবসায়ীরা।

বগাছড়ির ব্যাবসায়ী শহিবুল ইসলাম জানান, ৮-১২ টাকা করে অগ্রিম ফল কিনলেও লাভ তো নয়, উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। ক্রয়কৃত এসব আনারসে ফলন বর্ধক হরমোন ও ভিটামিন দিয়েও মৌসুমী বৃষ্টি না হওয়ায় বড় হয়নি ফল। কিন্তু গাছে গাছে পেঁকে যাচ্ছে আনারস। রাঙামাটি থেকে সুদূর খুলনা তে নিয়ে বিক্রি করেও খরচ উঠাতে হিমশীম খাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার চাষি মো. লাল মিয়া জানায়, ৫বিঘা জমিতে এবার তিনি আনারসের চাষ করেছেন। প্রায় ৫০হাজার ফল পেয়ে দেনা পাওনা পুষিয়ে উঠতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফলন বেশি হলেও হৃষ্ট-পুষ্ট ফল না হওয়ায় তেমন দাম পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগের নজরদারী ও সেচের ব্যবস্থা থাকলে হরমোন দিলে পরবর্তী ফলন নিয়ে ভাবতে হতো না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামপুর এলাকার এক আনারস চাষি জানান, প্লানোভিট প্লাস, রাইপেন-১৫ ও ইভাফনসহ নামে-বেনামে বেশ কিছু ভিটামিন ও হরমোন প্রয়োগ করে আনারসের অগ্রিম ফলন ও ফল বর্ধক করা হয়। এই পদ্ধতিতে কেউ কেউ লাভবান হলেও অনেকেই পাচ্ছেনা ন্যায্য দাম।

হরমোন প্রয়োগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলম বলেন, আনারস একটি মৌসুমী ফল। নানিয়ারচরে এই ফলের চাষ ব্যাপক হারে হয়ে থাকে। আনারস মৌসুমী ফল হলেও মৌসুমে কৃষকরা এর প্রকৃত দাম পান না। তাই হরমোন প্রয়োগ করে আগাম ফলন এনে বাজারজাত করে দাম পুষিয়ে নেয় চাষিরা। তবে যদি চাষিরা প্রয়োগ মাত্রা ও জমির গুনাগুন বুঝে হরমোন প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে তারা লাভবান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, মাঠকর্মীদেরকে আনারস চাষিদের আড়াআড়ি পদ্ধতিতে আনারস চাষ এবং হরমোন ও কীটনাশক প্রয়োগে সঠিক পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।

নানিয়ারচরে আনারস চাষিদের জন্য কৃষি বিভাগের চলমান কোন প্রকল্প আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আলাদাভাবে আনারস চাষিদের জন্য কোন প্রকল্প নেই। তবে মাল্টা, কমলা, কাজু বাদাম ও ড্রাগন ফল প্রকল্প আছে। তিনি আনারস চাষে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার ও কৃষক বান্ধব প্রকল্প হাতে নিলে চাষে আসবে ভাল ফলন। কৃষকরা পাবে ন্যায্য দাম। এবং লাভবান হবেন ব্যাবসায়ীরা।

আনারস চাষে কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং করছি। লাইসেন্স ছাড়া কেউ ব্যবসা করছে আমাদের চোখে পড়েনি। বাজারে যে সকল কীটনাশক রয়েছে তা মানবদেহের জন্য এতটা ক্ষতিকর নয়।