॥ সৌরভ দে ॥
পার্বত্য রাঙামাটিতে হঠাৎ করেই করোনাক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে রোববার ১১জন এবং শনিবার ৯জনের করোনা শনাক্ত হয়। যা গত ৪৮ দিনে সর্বোচ্চ! এর আগে রাঙামাটিতে ৫ এপ্রিল ১২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। রোববার আক্রান্ত ১১জনই রাঙামাটি সদরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে।
এদিকে রাঙামাটিতে নাগরিকদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। নিয়মিত প্রশাসনিক অভিযানের মাঝেও জন সমাগম বৃদ্ধি এবং মাস্ক পরিধানে অনিহার কারণেই মূলতঃ করোণাক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সারাদেশে করোনা শনাক্তের হার কমতে থাকলেও রাঙামাটিতে আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ার এই প্রবণতা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে প্রশাসনের। রোববার সারাদেশে নতুন করে হয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ জন, আর এদিন মৃত্যু হয় ২৮জনের। আক্রান্তের এ হার সহনশীল পর্যায়ে বলে মনে করছেন, জাতীয় বিশেষজ্ঞরা। এই প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি নিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৩০ মে পর্যন্ত। আর গণ পরিবহন বহন করতে পারবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী।
এ দিকে রাঙামাটি শহরে চলমান বেবী টেক্সীগুলোতে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে ইচ্ছামতো। বেশিরভাগ টেক্সিতেই চারজন করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। অথচ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ডবল। এমন অভিযোগ প্রতিদিনই করছেন যাত্রী সাধারণ; মজার বিষয় হলো যাত্রীরা ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ করলেও তৃতীয় বা চতূর্থ যাত্রী হতে কিন্তু আপত্তি জানাচ্ছে না। তিনজন যাত্রীর মঝেই গা ঘেঁসে বসে পড়ছেন নির্দিধায়।
রোববার (২৩ মে) সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, রোববার ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, এরা সকলেই সদরের; ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের এ হার আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া ২২ মে শনিবার ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ৯ জন করোনা পজেটিভ আসে। ওই ৯ জনের মধ্যে ৩ জন রাঙামাটি সদরের ও বাকি ৬ জন কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা।
ঈদের পর হতেই রাঙামাটিতে করোনা শনাক্তের হারে কিছুটা উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ১ মে-১৩ মে পর্যন্ত রাঙামাটিতে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল মোট ১৩ জন তবে ঈদের পর ১৬ মে-২৩ মে পর্যন্ত নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয় মোট ৩৫ জন।
রাঙামাটিতে হঠাৎ করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধির বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন ডা. মোস্তফা কামাল জানান, ঈদের আগে মানুষ বাড়িতে চলে যাওয়ায় টেস্ট কম হচ্ছিল তাই করোনা শনাক্তের হার কম ছিল তবে সম্প্রতি করোনা টেস্ট বেড়েছে যার কারণে শনাক্তের হারও বেড়েছে।
রাঙামাটিতে এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ভেরিয়েন্ট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। রাঙামাটিতে এখনো শুধু করোনা পজেটিভ/ নেগেটিভ কিনা এই টেস্ট করা হয়, ভেরিয়েন্ট টেস্ট করা হয় না।
সর্বশেষ তথ্যমতে রাঙামাটিতে এখনো পর্যন্ত ১০,৩৮৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৫১২ জন করোনা পজেটিভ এবং ৮৮৭৪ জন করোনা নেগেটিভ। আর করোনা পজেটিভ ১৫১২ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৪৫৪ জন।
জেলায় এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। সর্বশেষ মৃত্যু ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল।২২ মে পর্যন্ত রাঙামাটিতে মোট টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ১ম ডোজঃ ৩২,৬০২ জন, ২য় ডোজঃ ১৮৮৬১ জন।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২ হাজার ৩৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া দেশে নতুন করে আরও এক হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। দেশে মোট সাত লাখ ৮৯ হাজার ৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে ৮৯৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সাত লাখ ৩০ হাজার ৬৭৯ জন করোনা থেকে সুস্থ হলো।
রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৬টি ল্যাবে ১৫ হাজার ২০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১৫ হাজার ১৮২টি।
২৪ ঘণ্টায় নতুন ২৮ জন মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে পুরুষ ২০ জন ও নারী আটজন। এ পর্যন্ত পুরুষ মৃত্যুবরণ করেছেন আট হাজার ৯৪৮ জন ও নারী তিন হাজার ৪২৮ জন। এ ছাড়া মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন ও ষাটোর্ধ্ব ১৪ জন রয়েছেন।