অর্ধ শতাব্দীর ধরে স্বপ্ন দেখা লিচু বাগানের সেই সেতুটি আজও হয়নি

467

॥ অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই ॥

কর্ণফুলী নদীতে একটি সেতুর অভাবে রাঙামাটি-রাজস্থলী- বান্দরবান সড়কের লিচুবাগান ফেরীঘাট এলাকায় যানবাহনসহ জন চলাচলে ভোগান্তি লেগেই আছে। রাঙামাটি বান্দরবান ও রাজস্থলী থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিরাপদে এসে সবাইকে কর্ণফুলী নদীর লিচুবাগান এবং রাইখালীর অংশে এসে থমকে যেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সড়কের এই অংশে কর্ণফুলী নদীতে সেতু না থাকায় পারাপারে অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। অনেক সময় পারাপারে প্রায় আধ ঘন্টার অধিক সময় লাগে। যদি ফেরী অপর প্রান্তে থাকে তাহলে ১ ঘন্টাও লেগে যায়। সেতু থাকলে এই অংশ পার হতে সর্বোচ্চ ২/১ মিনিট লাগতো। কিন্তু সেতু না থাকায় এই সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। গত ৩০ বছর যাবৎ সড়কের এই অংশে সেতু নির্মাণের দাবী করে আসছে এলাকাবাসী। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় উচ্চ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসে সরেজমিন এলাকাটি পরিদর্শণ করে বিভিন্ন আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু সেতু নির্মাণ হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সীমান্তবর্র্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর উপর এই ফেরী যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া কক্সবাজার ও টেকনাফের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কর্ণফুলী নদীর এই স্থানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। প্রতিদিন এই ফেরীর উপর দিয়ে ৫-৬ শতাধিক ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে। তাছাড়া অংসখ্য মানুষ এই এলাকা দিয়ে নৌকা ও সাম্পান যোগে যাতায়াত করছে। সেতু না থাকায় সকলকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে অবস্থিত রাঙামাটি জেলার একমাত্র পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, গবেষণা কেন্দ্রের প্রয়োজনে প্রতিদিন এই ফেরী দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক কর্মকর্তা এই গবেষণা কেন্দ্রে আসেন কিন্তু ফেরীর কারণে সহজে যাতায়াত করা সম্ভব হয়না। রাইখালী-লিচুবাগান ফেরীঘাঠে দ্রুততম সময়ে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, অনেক সময় ফেরীর মধ্যে বা ফেরীতে উঠার সময় বিভিন্ন যানবাহন অচল হয়ে যায় এবং এসব যানবাহনে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র থাকে। রাত হয়ে গাড়ি সচল করতে না পারায় সেখানে পুলিশ পাহারা দিতে হয়। তাছাড়া ফেরী পারাপার নিয়ে অনেক সময় চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় যার ফলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এ নিয়ে থানা পুলিশের মাঝে একটা মানসিক চাপ বিরাজ করে থাকে। সেতু নির্মিত হলে পুলিশকে এ ধরনের ঝামেলা পোহাতে হবেনা।

এদিকে লিচুবাগান-রাইখালীর ফেরী ঘাঠের এ অংশে সেতু না থাকায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য এবং মৌসুমী ফলমূল বিশেষ করে আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য মৌসুমী ফল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ফলে উৎপাদিত ফলমূল যথাসময়ে বাজারজাত করতে না পারায় কৃষক সহ সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ফেরীর উপর দিয়ে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। তারাও ফেরীর কাছে এসে পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকেন। বিশেষ করে ফেরী চলাচলকালীন ফেরীতে করে অনেক সাধারণ লোকজন যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু নদীতে জোয়ারের সময় ফেরীর পাঠাতনে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। তখন হেঁটে চলা লোকজনকে কাপড় চোপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ সমস্যা নিত্য দিনের। আবার অতিবৃষ্টিতে ফেরীর পাটাতন নদীতে ডুবে গেলে তখন ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে জনদুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পায়।
তাই এলাকাবাসীসহ তিন পার্বত্য জেলার মানুষের জনদুর্ভোগ এড়াতে এবং এই সড়কের গুরুত্ব অনুধাবন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত লিচুবাগান-রাইখালীর কর্ণফুলী নদীর এই অংশে সেতু নির্মাণের জোর দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।