সাত বছরেও চালু হয়নি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস

351

॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে ১০ জানুয়ারি। কলেজটি শুরু থেকে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। স্থানীয় পাহাড়ি সংগঠন গুলোর বাধার মুখে প্রতিষ্ঠালগ্নের পর থেকে প্রথম তিন মাস এর পাঠদান স্থগিত ছিল। পরবর্তীতে ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে ৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালস্থ একটি পাঁচতলা ভবনে করোনারি ইউনিটে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ।

প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এখনো চালু করা হয়নি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ,অডিটোরিয়াম,লাইব্রেরি,আধুনিক ল্যাব ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিঘিœনত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।

কলেজটির যাত্রার দীর্ঘ ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস। নেই কোনো বাস্তবমুখী জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা। নেই শিক্ষার্থীদের থাকার মতো আবাসিক পর্যাপ্ত হোস্টেল। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় একই ছাদের নিচে চলছে ক্লাস,পরীক্ষা ও অফিসের কার্যক্রম। যেন খুঁড়িয়ে খুুঁড়িয়ে চলছে কলেজটি। এতে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বিগ্ন বিরাজ করছে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ সব সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৭ বছরেও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু হয়নি। ফলে মেডিকেল কলেজের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে হৃদরোগ করোনারি বিভাগে। শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে শ্রেণি কক্ষে গাদাগাদি করে বসছে শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে,রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ দেশের একটি অন্যতম প্রধান চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ১ বছর মেয়াদী হাতে-কলমে শিখনসহ স্নাতক পর্যায়ের ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে। প্রতিবছর ৫১ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে পাঁচটি ব্যাচ অধ্যয়নরত আছে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দৃপ্ত চাকমা জানান, তাদের আগের একটি ব্যাচ এমবিবিএস কোর্স শেষ করে বের হয়ে গেছে। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন করছেন। বর্তমানে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত প্রায় ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ,অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি,আধুনিক ল্যাব ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিঘিœনত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।

শিক্ষার্থীরা জানায় আমাদের একটাই দাবি, কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস দ্রুত নির্মাণ করা হোক; রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস দ্রুত নির্মাণ করলে তাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধান হবে। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের একই সেশনের আরেক শিক্ষার্থী মো.সাজেদুল হক সাবিত জানান,কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে গত দুই বছর আমরা আন্দোলনও করেছি। তবে এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু হয়নি। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ী আবাসিক হোস্টেল।

শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বিগ্ন বিরাজ করছে। তিনি আরো জানান, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারতো রাঙামাটিবাসী। কারণ রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে বর্তমানে শিক্ষকের সংকট নেই। তবে শিক্ষকদের কোনো আবাসিক হোস্টেল না থাকায় তারা নিজ নিজ গন্তব্য থেকে আসা-যাওয়া করছে। ফলে রাঙামাটিবাসী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা.প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া জানান,বর্তমানে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত আছে। সামনে আরো একটি ব্যাচ ভর্তি হবে। কিন্তু রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় সমস্যার কোনো শেষ নেই। বিশেষ করে শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা প্রকট। তিনি আরো জানান,রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য হ্যাচারি এলাকায় ২৬ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা অধিগ্রহণের সমস্যা সমাধানও হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ হলে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শুরু হবে।