ঢাকা ব্যুরো অফিস, ২৩ নভেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক সমাজের আটটি সংগঠনের পক্ষ থেকে “প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন: আইনগত বাধ্যবাধকতার চুক্তি চাই” শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশের সরকারী প্রতিনিধিগন যারা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করবেন তাদের কাছে সাতটি দাবী উপস্থাপন করেন। বক্তারা আরও বলেন, যদিও বিভিন্ন কারনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে যেতে পারছেন না, তবুও দেশের স্বর্থেই উক্ত সাতটি দাবীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ান জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উল্লেখ্য যে, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর ২০১৫, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ২১তম বৈশ্বিক সম্মেলন (ঈঙচ-২১) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে সকল দেশের অংশগ্রহনে একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রচারনায় যুক্ত এমন আটটি নাগরিক সংগঠনের নেটওয়ার্ক এই সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে। অক্সফাম এবং সিসিডিবি এ্যাক্ট অ্যালায়েন্স’র সহযোগীতায় সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া সংগঠনসমুহ হচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইন্ডিজিনিয়াস পিপলস অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড বায়োডাইভারসিটি (বিপনেট-সিসিবিডি), বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম (বিসিজেএফ), ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ-বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিসিডিএফ), কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ (সিডিপি) এবং ফোরাম অন এনভায়রনমেন্ট জার্নালিস্ট (এফইজেবি)।
সম্মেলনটি সঞ্চালনা করনে ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী।লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিএসআরএল এর জনাব জিয়াউল হক মুক্তা। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিএসআরএল এর মিসেস শরমিন্দ নিলোর্মী, এফইজেবি’র কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বাপা’র ডা. আব্দুল মতিন, অ্যাক্ট এলায়েন্স’র কামরুজ্জামান, এবং উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট’র আমিনুর রসুল বাবুল।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে জিয়াউল হক মুক্তার উত্থাপিত দাবীগুলো হচ্ছে (১) বাংলাদেশকে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন চুক্তি সই এবং তা বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘আন্তর্জাতিক জলবায়ু ন্যায়বিচার আদালত’ গঠনের দাবী করতে হবে (২) বৈশ্বিক ঊষ্ণতাবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ১.৫০ সেঃ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য উন্নত দেশগুলো থেকে প্রতিশ্রুতি নিতে হবে ৩. কার্বন নির্গমনের সর্বোচ্চ সীমা (চবধশরহম চড়রহঃ) কি হবে তারও একটা সুনিদৃষ্ট সময়সীমা থাকতে হবে, যা হবে “সাধারন অথচ সংশ্লিষ্ট সক্ষমতা ও ভিন্ন দায়ীত্ব পালনের ভিত্তিতে (৪) প্যারিস প্রটোকলে জলবায়ু তাড়িত অগত্যা বাস্তুচ্যূতদের ব্যবস্থাপনা বিষয়টিও পুনরায় আলোচনায় আনতে হবে যেটা কানকুন চুক্তির ১৪.এফ ধারায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল (৫) ক্ষয়-ক্ষতি সংক্রান্ত বিষয়ে প্যারিস চুক্তির মধ্যেই উপযুক্ত জায়গা (ঢ়ষধপব যড়ষফবৎ) নির্ধারণ করার দাবী করতে হবে যাতে ২০১৬ থেকেই এ বিষয়ে কাজ শুরু করা যায় (৬) অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রেই অতি বিপদাপন্ন দেশসমুহকে মেধাস্বত্ব বিহীন, বিনামূল্যে এবং জেন্ডার সংবেদনশীল প্রযুক্তি হস্তান্তর সুবিধা দিতে হবে এবং (৭) জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে সবুজ জলবায়ু তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোকে শর্ত ছাড়াই অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
জলাবায়ু আলোচনা নিয়ে সিএসআরএল এর মিসেস শরমিন্দ নিলোর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন গত দুই বছর যাবৎ সরকারী প্রতিনিধি দলে যারা অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে অভিজ্ঞ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরকে নেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে দেশের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা ক্রমান্বেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, অথচ পূর্বে এমনটি দেখা যায়নি।
বাপা’র ডা. আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমান প্রতিনিধিগনের ভূমিকা দেখে অশংকা হচ্ছে যে, তারা ধনী দেশের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের দেশের স্বার্থকে ওয়াক ওভার বা ছাড় দিবেন।
এফইজেবি’র কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু সম্মেলনে না গেলেও প্রতিনিধি দলের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বক্ষনিক নজর রাখা উচিৎ যাতে দেশের স্বার্থে বজায় থাকে। জলবায়ু আলোচনায় সরকারী প্রতিনিধি দলের অবস্থান কি এবং তাদের সমন্বয় কিভাবে হবে তা জনগনের নিকট প্রকাশ করার দাবী করেন ইক্যুইটিবিডি’র জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী।