কিভাবে করোনার টিকা নেবেন দূর্গম রাজস্থলী উপজেলার মানুষ?

348

|| আজগর আলী খান, রাজস্থলী ||

রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বেশিরভাগ দুর্গম এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় পায়ে হাঁটা পথ। যোগাযোগ অবস্থা এতটাই খারাপ কোন কোন অংশ থেকে এখনো উপজেলা সদরে আসতেই কিছু গ্রাম হতে দেড় থেকে দুদিন সময় লাগে। বিদ্যুৎ নেই, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক।

ফলে এখনও তারা দেশে থেকেও নিজেরা গৃহবন্দি হিসেবে রয়েছে। রাজস্থলী উপজেলার এই দুর্গম এলাকার মানুষ কি করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের সুবিধার আওতায় আসবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

স্থানীয়রা জানান, ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন ও গাইন্দ্যা ইউনিয়নের কিছু এলাকা আছে এ সব গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আসতে হয় পায়ে হেঁটে। বন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে আসতে একদিন সময় লাগে তাদের। সারা দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও তেমন কোনও উন্নয়নের ছোঁয়া এখনও এসব দুর্গম এলাকায় চোখে পড়ে না। অপরদিকে রাজস্থলীর পাশাপাশি বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের বিদ্যুতের সুবিধা ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের কোনও সুবিধা নেই। গ্রামের এসব সাধারণ মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে শুধু হাটের দিন দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিলাইছড়ি উপজেলা ও রাজস্থলীতে আসে। সরকার সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছে। ফলে সুবিধাবঞ্চিত দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । এখনও অনেকের মধ্যে টিকা গ্রহণের বিষয়ে কোনও ভালো ধারণা নেই। কেউ কেউ টিকার বিষয়ে অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন। আবার অনেকের ইচ্ছে থাকলেও দুর্গম এলাকা থেকে টিকা নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ, রুইহলাঅং মারমা জানান স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ওইসব মানুষকে টিকা নেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা মূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । দুর্গম কিস্ত পাড়া ও ভোতম পাড়ার স্থায়ীবাসিন্দারা এ প্রতিবেদক কে বলেন, ইপিআই যেভাবে টিকা কার্যক্রম চালায় যদি স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে সেভাবে ভ্যাকসিন কার্যক্রম করা যায় তাহলে আমাদের এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা অসহায় দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষজনকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

১ নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান স্বরসতি ত্রিপুরার কাছে তার ইউনিয়নে কতজন লোক ভ্যাকসিন নিয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার হতে সারে ৪ হাজার মানুষ বসবাস করে। পুরো ইউনিয়নটি দুর্গম এবং কিছু গ্রাম আছে যেমন বিলাইছড়ি সীমান্ত জান্দি মইন, মাঘাইন পাড়া, পূর্নবাসন, শীল ছড়ি, দোসড়ি, কিস্ত পাড়া, বলিপাড়া, হাতিছড়া, ভোতম পাড়া, এসব এলাকা থেকে উপজেলা সদরে আসতে ৭/৮ঘণ্টা সময় লাগে। অনেকের ইচ্ছে থাকলেও দুর্গম পথের কারণে আসতে চাচ্ছে না। বর্ষাকালে তো আসার কোন সুযোগই থাকে না। এলাকার মেম্বার কার্বারী ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে এলাকায় খবর পাঠিয়েছি যদি কেউ ভ্যাকসিন নিতে চায় তাহলে উপজেলায় এসে রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকেই বর্তমানে কোন অস্তিকর বোদ করছেন না। সবাই সুস্থ আছেন।

করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে এলাকার লোকজন কতটুকু জানেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের কিছু শিক্ষিত লোক আছে তারা কিছুটা জানতে পারেন, তবে সবার জানার সুযোগ নেই। কারণ দুর্গম এলাকা থেকে উপজেলায় আসতে পায়ে হেঁটে সময় লাগে একদিন। গ্রামের সবাই জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা সব বিষয়ে খোঁজখবর রাখে না। নিজেরা পায়ে হেঁটে গিয়ে কোনও মানুষকে বললে তখন তারা জানতে পারবে। আবার গ্রামের কিছু কিছু পাহাড়ে ওপরে মোবাইল নেটওর্য়াক পাওয়া যায় কারো জরুরী প্রয়োজন হলে সেখানে উঠে ফোনে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষ একদিন ধরে পায়ে হেঁটে ভ্যাকসিন নিতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে। ফলে দুর্গম এলাকায় বিশেষ বিবেচনায় করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে সরকারের ঘোষিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। না হয় করোনা ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত হবে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের জনসাধারণ।