॥ আলমগীর মানিক ॥
পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠির অসচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত ভোজ্যতেল বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়িরা। রাঙামাটি জেলার বাজারগুলোতে সাপ্তাহিক হাটের দিনে এসব ভোজ্য সয়াবিন ও সরিষার তেল প্রতিনিয়ত বিক্রি করে আসছে অসাধু ব্যবসায়িরা।
খোলা তেল কিংবা বোতলজাত তেলে পাহাড়ের বাজারগুলোতে বিক্রিরত ৭৫ ভাগ সয়াবিন তেলই আগাগোড়া ভেজাল। বিক্রি হচ্ছে নতুন তেল হিসাবে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভেজালবিরোধী তৎপরতার মধ্যেও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা চক্র। অপ্রতিরোধ্য দুষ্টচক্র প্রায় সব খাদ্যসামগ্রীতেই ভেজাল দিচ্ছে। মানহীন কিংবা নিম্নমানের পণ্য দিয়ে ক্রেতা সাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
এসব অসাধু ব্যবসায়ী বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণ ঘটিয়ে সরিষার তেল তৈরি করে থাকে। আর সয়াবিন তেলে ভেজাল হিসেবে মেশানো হচ্ছে পাম তেল, পোড়া মবিল, পশুর চর্বি ও খনিজ তেল। বিভিন্ন নামী-দামি কোম্পানীর নাম সম্বলিত ষ্টিকারে বিএসটিআই’য়ের স্টিকার লাগিয়ে এসব তেল বিক্রি করে আসলেও কোথা থেকে এসব তৈরি হয় সেটি অবগত ছিলোনা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি বিষয়টি স্থানীয়দের কাছ থেকে অবহিত হয় রাঙামাটির জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ তারই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমানের নির্দেশনায় শহরের রিজার্ভ বাজারের শুটকিপট্টি এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
শুটকিপট্টির বাসিন্দা রাঙামাটি জেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিল্টন বিশ^াসের মালিকানাধীন গীতা এন্টারপ্রাইজ অফিসে এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তাহমিনা সুলতানা ও আব্দুর রহমান। এসময় প্রসিকিউটর হিসেবে বিএসটিআই বিভাগীয় অফিসের ফিল্ড অফিসার (সিএম) ইকবাল আহমদ, এবং পরিদর্শক (মেট) প্রকৌঃ মোঃ জিল্লুর রহমানসহ কোতয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম মোবাইর কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন।
অভিযানের সময় মোবাইল কোর্ট কর্তৃপক্ষ মিল্টন বিশ^াসের ঘরে হাতে-নাতে বিভিন্ন ব্রান্ডের নাম সম্বলিত অনুমোদনহীন মোড়কজাতকৃত সয়াবিন তেল মজুদ রাখতে দেখতে পায়। এসময় পণ্য মোড়কজাতরণের নিবন্ধন সনদ গ্রহণ ছাড়া মোড়কজাত করে বিক্রি করায় ‘ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী মিল্টন বিশ^াসের মালিকানাধীন গীতা এন্টারপ্রাইজকে ৮০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। সংশ্লিষ্ট্যরা জানিয়েছেন, শুটকিপট্টীর জনৈক বাসিন্দা শিশু বিশ^াসের সন্তান রাঙামাটি জেলার যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মিল্টন বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরেই গীতা এন্টারপ্রাইজের নামে রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে অবৈধভাবে অনুমোদনবিহীন নকল সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল বাজারজাত করে আসছে।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারি নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাসাটিতে অভিযান চালিয়ে ভেজাল সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমান নকল সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। এসময় নকল সয়াবিন তেল বাজারজাত করার অপরাধে ব্যবসায়ী মিল্টন বিশ্বাস পলাতক থাকায় ঘটনাস্থলে পাওয়ায় তার মা’কে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় তাকে সতর্ক করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খাদ্যে ভেজালের কারণে সাধারণ মানুষ ১২ থেকে ১৫টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব রোগে মানুষের মৃত্যুহার বেড়েছে। ভেজাল ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত ভোজ্যতেল আহারে মানবদেহে জটিল ও কঠিন রোগ সৃষ্টি হয়। ভোজ্যতেলে ব্যবহার্য বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল ও সাবান তৈরির কাঁচামাল মানবদেহের অভ্যন্তরে একবার প্রবেশ করলে লিভার দেহ থেকে তা নিষ্কাশন করতে পারে না। আর ভেজাল তেল দিয়ে রান্না খাদ্য সামগ্রী আহারের ফলে নেফ্রাইটিস নামক জটিল কিডনি রোগ হতে পারে। আর এ রোগে আক্রান্তদের হাতে পায়ে পানি জমে ফুলে যায় এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে কিডনি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া হৃদরোগ, ক্যান্সার, লিভার সিরোসিসের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।