বান্দরবানে দুইবছরে তিন শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন এলজিইডির

355

॥ নুরুল কবির, বান্দরবান ॥

বান্দরবানের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র উদ্যোগে গত দুই বছরে প্রায় তিনশ কোটি টাকার বিভিন্ন ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়ক নির্মাণ হয়েছে। এর ফলে এলজিইডি গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, বদলে যেতে থাকে গ্রামীণ জীবনচিত্র। এখন বান্দরবানের প্রত্যন্ত জনপদেও রয়েছে সুন্দর-মসৃণ রাস্তা, বিশাল বিশাল ব্রিজ, খাল-ঝিরিতে কালভার্ট নির্মাণ করে পাড়ায় পাড়ায় সংযোগ স্থাপন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যন্ত পাড়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই ও দ্রুত পরিবহন করে শহরে, হাটবাজারে আনা যাচ্ছে, এতে দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকরা।

এলজিইডি বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদত মো. জিল্লুর রহমান জানান, গত দুই বছরে প্রায় তিনশ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বান্দরবান জেলায়।

সূত্র জানায়, বান্দরবান সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা-চেমীমুখ, বটতলী পাড়ার মানুষের দ্রুত যাতায়াতের জন্য সাঙ্গু নদীর ওপর ২২০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ করেন মেসার্স ইউটি মং ও মেসার্স শেখ হেমায়েত উদ্দিন নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আগামী মাসে উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

এলজিইডি কর্তৃক সিএইচটি আরডিপি (এডিপি) এবং ডিডিআরপি প্রকল্পের মাধ্যমে সদর উপজেলার হলুদিয়া-ভাগ্যকূল-টংকাবতী ব্রিকফিল্ড বাজার হয়ে চিম্বুক পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা হওয়ায় ওই এলাকার জনগণের যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তাটি বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে হলুদিয়া থেকে প্রান্তিকলেক পর্যন্ত ১৮ ফুট প্রস্ত কার্পেটিং দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চরম্বা দিঘীর কোণ হতে টংকাবর্তী হাতির ডেরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পাকা সড়কের উন্নয়ন কাজের টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। শীগ্রই এর কাজ শুরু হবে। এটি হলে প্রত্যন্ত জনপদের মানুষ সহজে যাতায়াতের সুবিধা পাবে।

এলজিইডি সূত্র জানায়, বান্দরবান শহরের কালাঘাটা-বড়–য়ার টেক রাস্তা, বালাঘাটা-মুসলিমপাড়া-বিক্রিছড়া সড়কে একটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এতে করে রাস্তার সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যানবাহন ও এলাকার লোকজনের চলাচল সহজতর হবে। এছাড়া কালাঘাটা-তারাছা সড়ক, রুমা উপজেলার রুমা-মুন্নামপাড়া সড়ক, রুমা পলিকাপাড়া হয়ে গ্যালেঙ্গা সড়ক নির্মাণ হয়েছে।

বান্দরবান এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এসব সড়ক নির্মাণের ফরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এর সুফল এলাকার লোকজন পাচ্ছে। এখন প্রত্যন্ত এলাকার উৎপাদিত কৃষি ও জুম চাষের ফসল-পণ্য কম সময়ে অল্প খরচে জেলা সদর ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা যাচ্ছে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

রুমার বাসিন্দা অংসানু মারমা বলেন, এলজিইডির মাধ্যমে রুমা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও সেতু নির্মাণ হওয়ায় সেখানকার সড়ক যোগাযোগ সহজ হয়েছে। পর্যটন এলাকা রুমায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সহজে ও কম খরচে দ্রুত রুমার পর্যটন এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে পারছে। এতে করে ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। আগে রাস্তা ও সেতু না থাকায় যে দুর্ভোগে পড়তে হতো, এখন নেই বললে চলে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গত দুই অর্থ বছরে বান্দরবানে এলজিইডি প্রায় তিনশ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ হলো- সদর উপজেলার সাঙ্গু নদীর ওপর ২২০ মিটার দীর্ঘ গোয়ালিয়াখোলা-চেমীমুখ সেতু, সুয়ালক-সুলতানপুর সড়ক, চেমীডলু-চেমীমুখ সড়ক, উদালবনিয়া-ঝংকা সড়ক, থানচি উপজেলার থানচি-বলিপাড়া সড়ক, লামা উপজেলার বানিয়াছড়া-গজালিয়া সড়ক, লামা-রূপসীপাড়া সড়ক, শীলেরতুয়া-রূপসীপাড়া সেতু, সাঙ্গু রাজাপাড়া সড়ক, রোয়াংছড়ি উপজেলার রোয়াংছড়ি-ঘেরাও সড়ক, রোয়াংছড়ি-ব্যাঙছড়ি সড়ক, কালাঘাটা-তারাছা সড়ক, রুমা উপজেলার রুমা বিসি-ম্যাওফাপাড়া ভায়া তারাছা ইউপি সড়ক, মুন্নামপাড়া সড়ক, বটতলী আরঅ্যান্ডএইচ রিঝুক ঝরনা সড়ক, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঈদগড়-বাইশারী সড়ক, ঈদগড়-আলেক্ষ্যং সড়ক, বাইশারী-দোছড়ি সড়ক, নাইক্ষ্যংছড়ি-তুমব্রু সড়ক, টিভি রিলে স্টেশন-ঘুমধুম বাজার সড়ক, নাইক্ষ্যংছড়ি-দোছড়ি-আলীকদম সড়ক, দোছড়ি-পাইনছড়ি সড়ক, ঈদগড়-জিসি কাগজিখোলা সড়ক এবং রেজু আমতলী-কুতুপালং সড়ক উল্লেখযোগ।