॥ নুরুল কবির, বান্দরবান ॥
বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে এ দুই উপজেলার চার ইউনিয়নে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের চারজনকে প্রাথমিকভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পর তাঁদের চুড়ান্তভাবে বহিস্কার করা হবে। মঙ্গলবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মঙ্গলবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এতে সভাপতিত্ব করেন। এসময় জেলা কমিটির সহসভাপতি আবদুর রহিম চৌধুরী, একেএক জাহাঙ্গীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক) লক্ষ্মীপদ দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যসাপ্রুসহ জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় লামার ৭ ইউনিয়ন ও নাইক্ষ্যংছড়ির ২ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদেরও সভায় ডাকা হলেও তাঁরা সভায় আসেননি বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২নং বাইশারী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা কমিটির সদস্য মো. আলমকে। আর দোছড়িতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয় উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরানকে।
দলীয়ভাবে মনোনয়ন না পেয়ে বাইশারীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর এবং দোছড়ি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন।
অপরদিকে লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেনকে। এই ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আক্তার কামাল। তিনি ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় নুর হোছাইনকে। এখানে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাস বলেন, ওমর ফারুক দল থেকে মনোনয়ন চায়নি, নিজেই প্রার্থী হয়েছেন। তবে যেহেতু তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদে রয়েছেন, তাই তাঁকেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে প্রাথমিকভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই উপজেলায় চার ইউনিয়নে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য দুই উপজেলায় ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। লামায় আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা কমিটির সহসভাপতি আবদুর রহিম চৌধুরীকে, যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যসাপ্রু-কে। নাইক্ষ্যংছড়িতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা কমিটির সহসভাপতি মো. শফিকুর রহমানকে, যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাহাদুরকে। লামার অন্য ৫ ইউনিয়নে কোনো বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কমিটির সহসভাপতি আবু তাহের বলেন, দলীয়ভাবে যাঁকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তিনি ছাড়া যারা দলীয় পদে থেকেও প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন তাঁদের বিষয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক যা সিদ্ধান্ত আসে সেটাই করা হবে।
জেলা কমিটির সহসভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, দলীয়ভাবে একজনই চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন, অন্য যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের দলে থাকার আর কি অধিকার থাকতে পারে! তাঁদের প্রাথমিকভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
তবে নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি ৩বারের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি। তিনিই চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে যাবেন।