রাঙামাটির ধনপাতা বন বিহারে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন

360

॥ বিহারী চাকমা ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা, বাংলাদেশের উন্নতি সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল প্রার্থনা জানিয়ে রাঙামাটি সদর উপজেলার আওতাধীন জীবতলী ধনপাতা বিহারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৭তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। সকালে বর্ণাঢ্য স্পীডবোট শোভাযাত্রার মাধ্যমে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবের দ্বিতীয় দিনের মূল অনুষ্ঠান সূচনা করা হয়। স্পীডবোট শোভাযাত্রায় অর্ধশতাতিক স্পীডবোট নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ প্রদক্ষিণ করা হয়।

অভুতপূর্ব এই স্পীডবোট শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। শোভাযাত্রায় শত শত পূণ্যার্থী অংশ নেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত পূণ্যার্থীরা ভোর ৬টা থেকে কাপ্তাই হ্রদের ডিসি বাংলো সংলগ্ন এলাকায় স্পীড বোট জড়ো হতে থাকেন। শোভাযাত্রার উদ্বোধনের পরপরই ধনপাতা অভিমুখে রওনা দেয় বর্ণিল এই স্পীডবোট শোভাযাত্রা।

শোভাযাত্রাটি ধপাতা বন বিহার ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। এসময় সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয় বিহার এলাকা। শোভাযাত্রা শেষে নিখিল কুমার চাকমা বনভান্তের প্রধানশিষ্য নন্দপাল মহাস্থবিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন। কুশল বিনিময়কালে নন্দপাল মহাস্থবির এবং নিখিল কুমার চাকমা দু’জনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নতি- সমৃদ্ধি ও বিশ্ব প্রাণীর হিতসুখ কামনা করেন। পুণ্যার্থীদের মাঝে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ধনপাতা বন বিহারের ১৭তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। ধনপাতা বন বিহারের উন্নয়ন কল্পে তিনি তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিহারের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের যোগাযোগের সুবিধার্থে উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।

মহা উপাসিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে আয়োজিত দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে বুদ্ধমুর্তি দান, সংঘদান, আটাশ বুদ্ধ চৈত্য নির্মাণে শ্রদ্ধা দান, সামিয়ানা দান, হাজার প্রদীপ দান, কল্পতরু দান, অষ্ট পরিষ্কার দানসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম, সাংবাদিক বিহারী চাকমা, স্থানীয় মগবান ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প রঞ্জন চাকমা, মৌজা হেডম্যান সুজিত দেওয়ান, রূপায়ন চাকমা প্রমূখ।

ধনপাতা বন বিহার পরিচালনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক কিরণময় চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ধর্ম দেশনা দেন বনভান্তের প্রধান শিষ্য নন্দপাল মহাস্থবির, ধনপাতা বন বিহারের সাবেক অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবোধি স্থবির, বর্তমান অধ্যক্ষ নতুন বংশ ভিক্ষু। বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম, বিহার পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি স্বপন দত্ত চাকমা, মৌজা হেডম্যান সুজিত দেওয়ান, ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প রঞ্জন চাকমা। দুই পর্বের অনুষ্ঠানে বক্তারা ধনপাতা বন বিহার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে অবদান রাখা ব্যক্তিগণকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে পূণ্যরাশি দান করেন। এসময় সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ধনপাতা বন বিহারের চারিদিক।

অনুষ্ঠানে রাঙামাটি রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়াত সুনীতি বিকাশ চাকমা (চক্ক), বিশিষ্ট লেখক ও ধর্মপ্রাণ উপাসক কুমুদ বিকাশ চাকমা, সদ্য প্রয়াত উপাসিকা তৃপ্তি চাকমাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ধনপাতা বনবিহার পরিচালনা কমিটির নের্তৃবৃন্দ। এছাড়া ধনপাতা বনবিহার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. অমিত চাকমার মা পূণ্যবান উপাসিকা আলো চাকমাকে শ্রদ্ধা জানানো হয় কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে। এসময় তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।

এদিকে ১৭তম দানোত্তম কঠিন চীবর দাানোৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রাঙামাটির লংগদু, বরকল, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি সদরসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থী অংশ নেন। রাঙামাটি জেলা ছাড়াও খাগড়াছড়ি, দিঘীনালা, মহালছড়ি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া, ইপিজেড এলাকা থেকেও পূণ্যার্থীরা ধনপাতায় আসেন। উল্লেখ্য, ধনপাতা বন বিহারটি সাধনানন্দ মহাথেরো বনভান্তের প্রথম সাধনার পীঠস্থান। এই স্থানে তিনি সুদীর্ঘ ১২ বছর ধ্যান সাধনা করেন বলে স্থানীয় মানুষও ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ধনপাতা বন বিহার একটি পবিত্র তীর্থ ভূমি।