থানচিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ তিনদিনে শিশুসহ ৪জনের মৃত্যু

295

॥ নুরুল কবির ॥

বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গত তিনদিনে শিশুসহ চারজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্েয একজন পাড়া কার্বারিও রয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ শিশুসহ দুজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে- আক্রান্ত এলাকায় দুটি চিকিৎসক দল ও পর্যাপ্ত ওষুধ পাঠানো হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়দিনের গরম এবং শুষ্ক মৌসুমে খাল, ঝিরি ও ছড়ার দুষিত পানি পান করায় ডায়রিয়ায় লোকজন আক্রান্ত হয়েছেন।

রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর ইউনিয়নের ৬নং ওয়াডের কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়া দেখা দেয়। শিশুসহ অন্তত ১৫/২০ আক্রান্ত হয়। এরমধ্েয একজন পাড়া কার্বারি, এক শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই আরও বলেন, গত তিনদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীরা হলেন- মেনতান পাড়া কার্বারি মেনতান ম্রো, নারেচা পাড়ার ম তৈ ম্রো এর ছেলে লংঞী ম্রো, মিং চিং পাড়ার মেনরো ম্রো এর ১২ বছরের ছেলে প্রেন ময় ম্রো এবং য়ং নং পাড়ার ক্রায়ন ম্রো।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে খাল, ঝিরি ও ঝর্নার দুষিত পানি পান করায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা মারা গেছেন। আরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করে এ জনপ্রতিনিধি বলেন, ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ চিকিৎসা ও ওষুধ দুর্গম এলাকায় পাঠানো দরকার। তবে, ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তিনি বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করেছেন।

এদিকে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ জানান থানচির দুর্গম রেমাক্রীর কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তবে স্বাস্থ বিভাগের কাছে দুজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।

ডা. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে দুর্গম এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। এসময় স্থানীয় লোকজন খাল, ঝিরি এবং ছড়ার ময়লাযুক্ত দুষিত পানি পান করেন। এ জন্য এ সময়ে দুর্গম এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া দেখা দেয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় ইতিমধ্যে দুটি চিকিৎসক দল পাটানো হয়েছে। তারা পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনসহ বিপুল ওষুধ নিয়ে আক্রান্ত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ওই এলাকায় ডায়রিয়ার পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে এরমধ্েয দুজন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তিনজন এখনো হাসপাতালে।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, থানচির দুর্গম কয়েকটি পাড়ায় দুষিত পানি পান করায় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে খাল ও ঝিরির পানি পান করায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

সিভিল সার্জন বলেন, চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে জেলার আলীকদমে ডায়রিয়ায় অনেকে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা সেবার কারণে সেখানকার ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বান্দরবান সদরসহ অন্য উপজেলার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী নেই বলে সিভিল সার্জন জানান।

এদিকে গত সাতদিনে আলীকদম উপজেলায় ডায়রিয়া ৫৬ জন রোগী আকান্ত হয়েছে, তবে সকলেই সুস্থ আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
এতে বলা হয়, গত সাত দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ৫৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৬ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন। ৪ জনকে রেফার করা হয়েছে। ৬ জন বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। রেফারকৃত রোগীরাও সুস্থ রয়েছেন। গত সাতদিনে এ উপজেলায় কোন ডায়রিয়ার রোগীর মৃত্যু নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আলীকদম উপজেলায় কযেকদিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা সুবিধা জোরদার করা হয়। মাঠপর্যায়ে কর্মীদের পাশাপাশি র‌্যাপিড রেসপন্স টিমের সদস্যদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে এবং মাঠপর্যায়ে স্যালাইন, ঔষধ ও পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেট সরবরাহ করা হয়।