॥ মনিরুল ইসলাম মনু ॥
বোনের ছেলে আসায় বান্দরবানের একটি রেস্টুরেন্টে স্যুপ খেতে বসেছি এক সাম্প্রতিক সন্ধ্যায়। ঢুকার কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমুল ঝগড়া বেঁেধ গেলো ম্যানেজমেন্ট এবং একটি কাস্টমার গ্রুপের মধ্যে। ক্ষিপ্ত কাস্টমারদের অভিযোগ- দেড় ঘন্টা হয়ে গেছে। এখনো খাবার দেয়া হয় নি।
মালিক পক্ষ বলছেন, এ ধরনের রেস্টুরেন্টে খেতে হলে হাতে সময় নিয়ে আসতে হয়। না খেয়েই বেরিয়ে গেলেন তরুণ কাস্টমারগণ। তরুণরা বিল দিতে চাইছিলেন। মালিক পক্ষ নিতে চাইলেন না।
কাস্টমার গ্রুপ বেরিয়ে যাওয়ার পর তরুণ মালিকটিও গজরাতে থাকলেন। এমন ‘ক্ষ্যাত’ কাস্টমার না এলেই তারা খুশি- এমনটা বলছিলেন তিনি বারবার।
আমরা স্যুপ এবং অংথনের অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম আধা ঘন্টা আগে। ততক্ষণে আমাদের সামনে ৪টি গ্লাস, ৪টি হাফ প্লেট, ৪টি চামচ ও এক বোতল মিনারেল পানি এলো। গ্লাস হাতে নিতেই ভাগিনা বললো, “মামা গ্লাসে পিঁপড়া।” ওর মৃদু চিৎকার শুনতে না শুনতেই আমার হাতে ধরা গ্লাসের পিঁপড়া আঙুলে কামড় দিয়ে তার অবস্থান জানান দিলো।
আমি তরুণ মালিককে ডেকে বললাম, ওই কাস্টমাররা না হয় ‘ক্ষ্যাত’। কিন্তু আমাদের গ্লাসে পিঁপড়া কেন বাবা? ‘তরুণের নির্দেশে একজন এসে গ্লাসগুলো নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে এলেন ৩টি গ্লাস নিয়ে’।
দৃষ্টি আকর্ষণ করায় সমস্যা কাটলো। কিন্তু বাটি আর প্লেট মুছতে গিয়ে দেখি, অনেকটা নোংরা। ভালো করে ধোয়া হয় নি। চিন্তা করলাম, একটু আগে এক পশলা ঝগড়া দেখার পর নিজেরা আবার বাক-বিতন্ডা করা ঠিক হবে না।
অর্ডার দেয়ার সময় জানতে চেয়েছিলাম চিংড়ি বিহিন স্যুপ আছে কিনা। বেশ মোলায়েম স্বরে উত্তর পেলাম, জ্বি স্যার। চিংড়ি না দিয়েই স্যুপ দেয়া যাবে।
কিন্তু বাটিতে স্যুপ সার্ভ করতে গিয়ে ভাগিনা দেখলেন স্যুপে চিংড়ি আছে। কিছুটা গরম থাকলেও এই স্যুপকে গরম বলা যাবে না। এরপরও কিছুই বললাম না। আমি ছাড়া অন্য ৩ কিশোর স্যুপ খেলেন। আমি অংথন আর এক গ্লাস পানি খেলাম। কফির কথা বলায় আমার সাথের ৩ কিশোর রাজী হল না। বললো, শখ মিটে গেছে।
বিল পরিশোধ করে চলে এলাম।
ভাবছি, ট্যুরিজম বিকাশের জন্য এমন রেস্টুরেন্টগুলোর বিষয় মাথায় নিতে হবে সবার আগে। নাহলে একবার এসে বান্দরবানে বারবার আসার শখকে কবর দিয়ে পর্যটকরা ফিরে যাবেন। আর এতে বান্দরবানে পর্যটন খাতের বারোটা বেজে যেতে পারে।