গর্জনতলী শাক্যমনি বৌদ্ধবিহারে ১৩তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত

142

॥ ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ॥

রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। এবারে সর্বপ্রথম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে নানিয়ারচর উপজেলা বুড়িঘাট ইউনিয়নের গর্জনতলী পাড়া শাক্যমনি বৌদ্ধ বিহারে ১৩ তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বিকেলে শুরু হয়ে সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে শেষ হয় দুইদিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানান ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধমুর্তি দান, কঠিন চীবর দান,সংঘদান,অষ্টপরিষ্কার দান, হাজার প্রদীপ দান,কল্পতরু দান, আকাশ প্রদীপ উৎসর্গ ও ফানুস বাতি উৎসর্গসহ নানাবিধ দান অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুরে ঢোলের তালে নেচে নেচে উৎসব মুখর পরিবেশে কঠিন চীবর ও কলপতরুকে প্রদক্ষিণ করে আনন্দ শোভাযাত্রা করেন পুণ্যার্থীরা। পরে পঞ্চশীল,উৎসর্গ,নানাবিধ দান ও বিশ্বে শান্তি মঙ্গল প্রার্থনায় বিশেষ প্রার্থনা পাঠসহ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়। বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ধর্মপাল ভিক্ষুকে বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠ দান কঠিন চীবর উৎসর্গ করেন ইপন বিকাশ চাকমা।

এ সময় ধর্মীয় সভার অনুষ্ঠান পরিচলনা করেন শোভন চাকমা ও সোহাগ চাকমা। বক্তব্য রাখেন,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ইলিপন চাকমা, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঐ এলাকার বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৮নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বীর চন্দ্র চাকমা,বিহার পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা সভাপতি নতুন কৃষ্ণ চাকমা ও সহসভাপতি চীরজীৎ চাকমা। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন চন্দনা চাকমা। পঞ্চশীল প্রার্থনা পাঠ করেন অমর বিকাশ চাকমা ও চিজি চাকমা।

এতে বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্বৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্য ধর্ম দেশনা দেন, ফুরমোন সাধনাতীর্থ আন্তর্জাতিক বনধ্যান কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ভৃগু মহাস্থবির, রতœাংকুর বনবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, বন শাখা চিত্তারাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ মৈত্রী লংকার মহাস্থবির ও গর্জনতলী পাড়া শাক্যমনি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ধর্মপাল ভিক্ষু ও বিমুক্তি জ্যোতি স্থবিরসহ অন্যান্য প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আসা এক পুণ্যার্থী শ্রাবণ চাকমা বলেন,‘প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও বিহারে ১৩তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উদযাপন করেছি। বছরের প্রথম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হওয়া এবং বৌদ্ধদের এটি ধর্মীয় প্রধান উৎসব হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অনেক পুণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। যা গতবছরের তুলনায় এবছরে পুণ্যার্থীর সংখ্যা প্রায়ই দ্বিগুণ বেড়েছে।’

আরেক পুণ্যার্থী কালো বরণ চাকমা ও দিগন্ত চাকমা বলেন,‘ভগবান বুদ্ধের প্রধান সেবিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত এ চীবর দান বৌদ্ধধর্মীলম্বীদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিক্ষুরা তিনমাস বর্ষাবাস শেষে মাসব্যাপী শুরু হয় এ কঠিন চীবর দানোৎসব। প্রথমত ভগবান বুদ্ধের প্রধান সেবিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা থেকে একটি চীবর বুনে ভগবান বুদ্ধকে দান করেছিলেন। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিবছর এসময়ে বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।’

ধর্মদেশনায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বলেছেন,‘কুশল কর্মকে গ্রহণ করে মনকে পবিত্র করতে হবে। মন পবিত্র হলে জীবনের সদগতি ও সুগতি লাভ হয়। যা পরে কর্ম সম্পাদনে সবসময় সদগতির মাধ্যেমে জীবনে সুখের হেতু লাভ সম্ভব হবে কিন্তু কখনও পরিহানী হবে না। জন্ম জন্মান্তরে সুখ হেতু লাভ করতে হলে কুশল কর্ম গ্রহণ করতে হবে। কুশল কর্ম গ্রহণ করলে কখনও কেউ নিরাশ হয় না। সেজন্য অকুশল কর্মকে ত্যাগ করে কুশল কর্মকে গ্রহণ করতে হবে।’

দেশনায় আরও বলা হয়,‘ভগবান বুদ্ধের সময়কাল থেকে দানের শ্রেষ্ঠ দান হিসেবে বিবেচিত কঠিন চীবর দান। ভগবান বুদ্ধের সময় কালে তার প্রধান সেবিকা বিশাখা এ দান প্রবর্তন করেছিলেন। যার কারণে বৌদ্ধদের মাঝে এ দানকে শ্রেষ্ঠদান বলা হয়।’