রাঙামাটি শহরের উলুছড়া ছাবা বৌদ্ধ বিহারে ১৫তম কঠিন চীবর দানোৎসব

204

॥ মেহেদী ইমাম ॥

রাঙামাটির উলুছড়া ছাবা বৌদ্ধ বিহারের ১৫তম প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবরদান উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় পাঠক পাঠিকা ও দায়ক-দায়িকাদের ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে প্রকাশিত ”প্রজ্ঞা” নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের। সোমবার (১০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দানোত্তম কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৯৯আসনের সাংসদ দিপংকর তালুকদার।

এসময় প্রধান সদ্ধর্মালোচক পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ রাঙামাটি সদর সভাপতি পূন্যজ্যোতি মহাথের, ছাবা বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ শুভদর্শী মহাথের, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রাঙামাটি সহকারী কমান্ড্যান্ট আব্দুল মুত্তাকীম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা ও বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনুচিং মারমাসহ সাংবাদিক এবং গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

জুঁই চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দায়ক-দায়িকাগণ বুদ্ধ মূর্তি দান, সঙ্ঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, কল্পতরু দান, কঠিন চীবরদানসহ নানাবিধ দান সম্পন্ন করে। বৌদ্ধ ধর্ম গুরুরা এসময় বিশ্ব শান্তি কামনা করেন।

বক্তব্যে সংসদ সদস্য দিপংকর তালুকদার এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছাবা বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন বলেন, উলুছড়া এলাকার অবস্থা এমন হয়েছে যেন আলোর নিচে অন্ধকার। সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার লক্ষ করা গেলেও এই এলাকায় সড়ক, সেতু, বিদ্যালয়, সড়কবাতি, বিহার সংস্কারসহ নানাবিধ উন্নয়ন প্রয়োজন। রাঙামাটির সব এলাকায় উন্নয়ন পৌঁছালেও এই এলাকায় আজো উন্নয়ন লক্ষণীয় নয়। তিনি এসময় এলাকার সার্বিক উন্নয়নে দিপংকর তালুকদারের দৃষ্টি কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি দিপংকর বলেন, ধর্ম শান্তির শিক্ষা দেয়। ধর্ম পরশ্রীকাতরতা দূর করতে সাহায্য করে। ধর্ম বিনয়ী হতে শেখায়। তাই সকলকে বনভান্তের অনুসরণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি ভেদাভেদী হতে উলুছড়া পৌঁছাতে আনসার ক্যাম্প এলাকায় একটি সেতু প্রয়োজন। আনসার ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ নিয়ে একটু জটিলতা রয়েছে। তাই আনসার ক্যাম্পের বাউন্ডারির পাশ দিয়ে সড়ক নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসময় তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল হতে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। আপনাদের এই এলাকার যাবতীয় সমস্যা সমাধান হবে। তবে সময় প্রয়োজন। সেতু, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সকল ধরণের উন্নয়ন হবে এই এলাকায়।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা পূঁজা, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ঈদে মিলাদুন্নবী ও প্রবারণা পূর্ণিমায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা ও আয়োজক কমিটির সকলে সচেতন ছিলেন বলে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নিজেরা সচেতন থাকবেন। তবেই শান্তি সম্প্রীতির সাথে সকল ধর্মাবলম্বীদের উন্নয়ন সম্ভব।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি সরকারী কলেজ অধ্যক্ষ তুষার কান্তি বড়ুয়া। এসময় সদ্ধর্মদেশনায় রাঙামাটি মৈত্রী বিহার আবাসিক ভিক্ষু নাইন্দা সারা থের বলেন, কঠিন চীবরদান এসে আমরা সবাই ধর্ম দেশনা শুনে নির্বান যেতে চাই। তবে ভিক্ষুরা চাইলেই আপনি নির্বাণ যেতে পারবেন না। আপনাকে পঞ্চশীল ও ত্রীশরণ পালন করতে হবে। ধর্ম দেশনা শুনে আপনারা উত্তম রুপে বুঝতে সক্ষম হন না। তবে আপনাদের কোমলমতী সন্তানদের যখন ধর্ম দেশনা শুনতে ভিক্ষুদের নিকট পাঠাবেন তখন তারা প্রকৃত বন্দনা শিখবে। তবেই তারা ধর্ম শিক্ষা শিখে নির্বাণ গমন করতে পারবে।