বান্দরবানে বিশেষ অভিযানে ৭জঙ্গিসহ আটক ১০ ॥ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

160

॥ নুরুল কবির-বান্দরবান থেকে ॥

বান্দরবান ও রাঙামাটির গহীন অরণে অভিযান চালিয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয় (র‌্যাব) ৭ ও ১৫ এর সদস্যরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ, ওয়াকিটকি, বাইনুকুলার এবং সামরিকসহ বিভিন্ন পোশাক উদ্ধার করে। এ সময় সমতলের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সাতজন এবং পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর তিনজনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবানের র‌্যাব ১৫ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংকালে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর ) রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ির সাইজাম পাড়ায় র‌্যাব কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে ১৫ ও র‌্যাব ৭ এর সদস্যরা অভিযান চালায়। এসময় সমতলের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাত সদস্য ও কেএনএফ এর তিনজনসহ মোট ১০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সাতজন হলেন- সৈয়দ মারুফ প্রকাশ মানিক (৩১), ইমরান হোসাইন প্রকাশ শাওন (৩১) কাওসার প্রকাশ শিশির (৪৬), জাহাঙ্গীর আহম্মেদ প্রকাশ জুনু (২৭), মো. ইব্রাহিম প্রকাশ আলী (১৯), আবু বক্বর সিদ্দিক বাপ্পি (২৩) ও রুফু মিয়া (২৬) এবং কেএনএফ এর তিনজন হলেন- জৌথান সাং বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯) ও মাল সম বম (২০)। জঙ্গি সাতজনের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় হলেও কেএনএফ এর তিনজনের বাড়িই বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায়। অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে- এসবিবিএল বন্দুক ৯টি ও গুলি ৫০ রাউন্ড, এসবিবিএল বন্দুকের কেইস ৬২টি, হাত বোমা (ইআইডি) ৬টি, কার্তুজ কেইস একটি, কার্তুজ বেল্ট দুটি, দেশীয় পিস্তল একটি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি একটি ও চার্জার তিনটি, কুকি চীন স্টেট লেখা দশটি মানচিত্র এবং সামরিকসহ ব্যবহারের বিভিন্ন পোশাক ও সরঞ্জাম।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যমে শাখা প্রধান আরও বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ হতে পাওয়া তথ্যের পর্যালোচনা করে র‌্যাব নিশ্চিত হয় যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া (পূর্বঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) এর বিপুল সংখ্যক সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি গহীন জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) গড়ে উঠে। সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া এর তিন বছর মেয়াদী একটি চুক্তি হয়। চুক্তি মতে অর্থের বিনিময়ে দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার জঙ্গি ও র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে (গত ১০ অক্টোবর ২০২২)থেকে র‌্যাব পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ের জঙ্গলে অভিযান শুরু করে। অভিযানের দশ দিনের মাথায় অভিযানে সাফল্য আসে। অভিযানে বিলাইছড়ির সাইজামপাড়ায় সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও বিপুল অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলেন খন্দকার আল মুইন বলেন, অভিযানে বিলাইছড়ির সাইজামপাড়ায় একটি আস্তানা ধ্বংস করা হয়। পার্বত্য এলাকায় আরও কয়েকটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী আস্তানা থাকতে পারে। এছাড়া জঙ্গি সংগঠন (জামাতুল আনসার) এর আরও অন্তত ৫০ জন সদস্য বিভিন্ন আস্তানায় অবস্থান নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে র‌্যাব মনে করছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক উগ্রবাদী সংগঠনে জড়িত হয়ে দেড় মাস হতে দুবছরের বেশি সময় ধরে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে ৫০ জনের বেশি জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠেনের আমির হলেন মো. আনিসুর রহমান প্রকাশ মাহমুদ। এছাড়া সংগঠনের ছয়জন শূরা সদস্য রয়েছে। এরমধ্েয আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখা প্রধান, মাসুকুর রহমান সামরিক শাখা প্রধান, গ্রেপ্তার মরুফ আহমদ মানিক সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন অর্থ ও গণমাধ্যম শাখা প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। র‌্যাব সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার মারুফ আহমেদ মানিক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এসএম কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হাফেজ নাঈমের ছোট ভাই। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় জঙ্গি সদস্যরা রং মিস্ত্রি, টেইলারসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পরস্পর যোগাযোগ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সংগঠিত হয়। এবং জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তারা শারীরিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের জন্য পটুয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সিনিয়র সদস্যদের তত্ত্বাবধানে সেইফ হাউজে থাকে। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে গহীন জঙ্গলে প্রশিক্ষণের জন্য আসে। র‌্যাব সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি গড়ে উঠা সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এর সাথে চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি জঙ্গল লোকালয়ের বাইরের এলাকায় প্রশিক্ষণ নেয়।

এদিকে পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এর কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। কেএনএফ প্রধান নাথান বমকেও দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে কেএনএফ সদস্যরাও গা ঢাকা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানে হয়।