॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি। তার চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়, সবুজ বনায়ণ এবং স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশির সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ পুরো রাঙামাটিকে বুকে ধারণ করে নিয়েছে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সৃষ্ট চোখ ধাঁধানো পাহাড়ি ঝরণা। দেশের ষড় ঋতুর সৌন্দর্য দেখা মিলে এখানে। যার পরতে পরতে প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যের মহিমায় উঁকি দিয়ে কাছে টানে পর্যটকদের।
প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি জেলার বরকল উপজেলার শিলার ডাক এলাকায় অবস্থিত ‘সুবলং ঝরণা’। স্থানীয়দের কাছে ‘শিলার ডাক ঝরণা’ নামে ব্যাপক পরিচিতি। শিলার ডাক ঝরণাটি বরকল উপজেলার সবচেয়ে বড় ঝরণা। ভরা বর্ষা মৌসুমে মূল ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে এবং অপূর্ব সুরের মূর্ছনায় পর্যটকদের সযতনে কাছে টানে।
জেলায় পাহাড়ে ছোট-বড় অসংখ্য ঝরণা থাকলেওে কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে ঝরণাটি গড়ে উঠায় পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদ পরিভ্রমণের সময় ঝরণাটির সৌন্দর্য দেখতে একবারের জন্য হলেও ছুটে যায়। যিনি একবার হ্রদ ভ্রমণ করেছেন তিনি যদি সুবলং ঝরণার সৌন্দর্য অবলোকন এবং ঝরণার শীতল পানিতে গাঁ ভিজিয়ে না যায় তাহলে তার হ্রদ ভ্রমণটা পুরোয় বৃথা।
পর্যটকদের ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বরকল উপজেলা প্রশাসন ওই স্থানে গড়ে তোলেছে নানারকম সৌন্দর্যমন্ডিত স্থাপনা এবং ফুলের বাগান। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন ঝরণার সৌন্দর্যটিতে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলেছে। রাঙামাটি সদর হতে সুবলং ঝরণার দুরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। বোটযোগে কাপ্তাই হ্রদ মাড়িয়ে তবেই সেই কাঙ্খিত সুবলং ঝর্ণায় পৌছাতে হবে। যাত্রাযোগে হ্রদের অপার সৌন্দর্য শান্তির পরশ বিলিয়ে দিবে পর্যটকদের।
ঢাকার একটি প্রাইভেট ফার্মে কাজ করা পর্যটক লিমা আক্তার বলেন- অনেক ভাল লাগছে সুবলং ঝরণা দেখে। তবে ঝরণাটি দেখার স্থলে যদি নারীদের কাপড় বদলানোর ব্যবস্থা রাখা যায় তাহলে নারীরা স্বাচ্ছন্দে অনেক আনন্দ করতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্টে চাকরী করা মো. সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন-পর্যটন স্পটগুলোতে ব্যবস্থাপনার উন্নতি, খাবার মান বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে এ জেলায় পর্যটকের সংখ্যা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
রাঙামাটি রিজার্ভ পুলিশের আবাসিক পরিদর্শক (আরআই) মো.শাহ আলম বলেন- সুবলং ঝর্ণায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। শুধু সুবলং ঝরণা নয়; জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশের এ চৌকস দলটি।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন-বিদেশের চেয়ে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি অনেক সুন্দর। তাই বিদেশ ভ্রমণ না করে রাঙামাটিতে ভ্রমণে আসার জন্য পর্যটকদের আহ্বান জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ভুঁড়িভোজন:
বোটযোগে কাপ্তাই হ্রদ এবং সুবলং ঝরণা পরিভ্রমণ শেষে নিশ্চিই পেট ক্ষুধায় কাতুমাতু করবে। তাই ক্ষুধা এবং জিহ্বার স্বাদ মিটাতে চাইলে হ্রদের পাড় ঘেঁষে পাহাড়ি টিলায় গড়ে উঠেছে মুখরোচক ভিন্নরকম বাহারী রকমের পাহাড়ি খাবার। যেমন-পেদাটিং টিং, টুকটুকি ইকোভিলেজসহ অসংখ্য রেন্টুরেন্ট। সেখানে পাবেন-বেম্বো চিকেন, সিদ্ধ শাক, মরিচ ভর্তা, হ্রদের তরতাজা চাপিলা ফ্রাই, কেঁচকি মাছ, বাঁশকোড়ল, কাঁকড়া, বনমোরগ, পাহাড়ি চালের ভাতসহ অসংখ্য সুস্বাদু স্থানীয় খাবার। স্বাদ এবং সাধ্যর মধ্যে অর্ডার করে ভুঁড়ি ভোজন এবং রসনা বিলাসের স্বাদ মিটিয়ে নিতে পারবেন।
যে ভাবে যাওয়া যায়ঃ রাজধানী ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে আসতে চাইলে ঢাকার সায়দ্যাবাদ,কমলাপুর, ফকিরাপুল,গাবতলী, যাত্রাবাড়ি থেকে রাঙামাটিগামী এসি-ননএসি বাসে সরাসরি রাঙামাটি জেলায় চলে আসা যাবে। এরপর রাঙামাটি শহরে নেমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে শহরের পর্যটন, রির্জাভবাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং রাঙামাটি ফিসারী ঘাট এলাকা থেকে নৌকা বোট কিংবা স্পিটবোটযোগে নির্ধারিত ভাড়া প্রদান করে সুবলং ঝরণায় যাওয়া যাবে।